পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
মানুষের ধর্ম্ম

প্রজ্ঞানেনৈনমাপ্লুয়াৎ

—যুক্তিতর্কের যোগে বাহ্যজ্ঞানের বিষয়কে যেমন করে জানি এ তো তেমন করে জানা নয়, অন্তরে হওয়ার দ্বারা জানা। নদী সমুদ্রকে পায় যেমন করে, প্রতিক্ষণেই সমুদ্র হতে হতে। এক দিকে সে ছোটনদী, আর-এক দিকে সে বৃহৎ সমুদ্র। সেই হওয়া তার পক্ষে সম্ভব, কেননা সমুদ্রের সঙ্গে তার স্বাভাবিক ঐক্য; বিচ্ছেদের ভিতর দিয়ে সেই ঐক্য। জীবধর্ম্ম যেন উঁচু পাড়ির মতো জন্তুদের চেতনাকে ঘিরে আটক করেচে। মানুষের আত্মা জীবধর্ম্মের পাড়ির ভিতর দিয়ে তাকে কেবলি পেরিয়ে চলেচে—মিলেচে আত্মার মহাসাগরে—সেই সাগরের যোগে সে জেনেচে আপনাকে। যেমন নদী পায় আপনাকে যখন সে বৃহৎ জলরাশিকে আপন করে, নইলে সে থাকে বদ্ধ হয়ে, বিল হয়ে, জলা হয়ে। তাই বাউল মানুষকে বলেচে, “তোরি ভিতর অতল সাগর।” পূর্ব্বেই বলেচি মানুষ আপন ব্যক্তিগত সংস্কারকে পার হয়ে যেজ্ঞানকে পায়, যাকে বলে বিজ্ঞান, সেই জ্ঞান নিখিল মানবের, তাকে সকল মানুষই স্বীকার করবে, সেই জন্যে তা শ্রদ্ধেয়। তেমনি মানুষের মধ্যে স্বার্থগত আমির চেয়ে যে-বড়ো আমি, সেই আমির সঙ্গে সকলের ঐক্য, তার কর্ম্ম সকলের কর্ম্ম। একলা আমির কর্ম্মই