পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মোতিঝিল
৯৯


পর রাজা রাজবল্লভ ঢাকার সহকারী শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত হন; আলিবর্দীর মৃত্যুসময়ে তিনি মুর্শিদাবাদে উপস্থিত ছিলেন। ঘসেটী বেগম তাহাকে অত্যন্ত বিশ্বাস করিতেন।[১] বেগমের রক্ষার জন্য রাজা গোপনে কাশীমবাজারের ইংরেজকুঠির অধ্যক্ষ ওয়াট্‌স সাহেবের সহিত সিরাজের বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন। তিনি দ্বীয় পুত্র কৃষ্ণদাসকে সপরিবারে কলিকাতায় পাঠাইয়া দেন। সিরাজ তাহার সহিত ইংরেজদের এইরূপ অসদ্ব্যবহারের কথা মৃত্যুশয্যায় শায়িত আলিবর্দীকে জানাইলে, নবাব কাশীমবাজারে সার্জন ফোর্থ সাহেবকে সে কথা জিজ্ঞাসা করেন। ফোর্থ সাহেব সে কথা অস্বীকার করিয়াছিলেন। সিরাজ কিন্তু ইহার প্রমাণের জন্য পুনর্বার চেষ্টা করিতে প্রবৃত্ত হন; ইতিমধ্যে আলিবর্দী খাঁর জীবনবায়ুর অবসান হয়।

 আলিবর্দীর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ খ্রীঃ অব্দের এপ্রিল মাসে সিরাজউদ্দৌলা মোতিঝিল আক্রমণ করিবার আদেশ দিলেন। ঘসেটী বেগম যে-সমস্ত সৈন্যকে পূর্ব হইতে অর্থাদি প্রদান করিয়া তাহার সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হইতে বলেন, তাহাদের মধ্যে অধিকাংশই অগ্রে পলায়ন করে। তাহার প্রণয়পাত্র মীর নজর আলি অতি অল্পসংখ্যক সৈন্য লইয়া মোতিঝিলে অবস্থিতি করিতেছিলেন, তাহারই কুপরামর্শে ঘসেটা সিরাজকে বাধা দিতে কৃতসঙ্কল্প হন। সিরাজের সৈন্যগণ মোতিঝিল আক্রমণ করিলে, নজর আলি অনন্যোপায় হইয়া সিরাজের সৈন্যাধ্যক্ষ দোস্ত খাঁ ও রহিম খাঁকে অনেক উপহার প্রদান করিয়া, উপস্থিত বিপদ হইতে নিষ্কৃতি লাভ করেন। পরে যাবতীয় সম্পত্তিসহ ঘসেটী বেগম ধৃত হইয়া সিরাজের নিকট উপস্থিত হইলে, সিরাজ তাহাকে বন্দী অবস্থায় থাকিতে অনুমতি প্রদান করেন। তদবধি মোতিঝিল সিরাজের হস্তগত হয়।

 লং, হন্টার প্রভৃতি ভ্রমক্রমে লিখিয়াছেন যে, মোতিঝিলের প্রাসাদ সিরাজউদ্দৌলা কর্তৃক নির্মিত হয়। পরন্তু সিরাজের প্রাসাদের নাম হীরাঝিলের প্রাসাদ, তাহাকে মনসুরগঞ্জের প্রাসাদও বলিত। বোধহয় তাহার হীরাঝিল ও মোতিঝিল একই ভাবিয়া এইরূপ ভ্রম করিয়া থাকিবেন। বাস্তবিক হীরাঝিলের ও মোতিঝিলের প্রাসাদ দুইটি স্বতন্ত্র। মোতিঝিল ভাগীরথীর পূর্ব তীরে এবং হীরাঝিল পশ্চিম তীরে অবস্থিত ছিল। হীরাঝিলের প্রাসাদ অনেক দিন হইল, ধ্বংসকবলে পরিণত হইয়াছে, হীরাঝিল ও মোতিঝিল ভাগীরথীগর্ভে মিশিয়া গিয়াছে। তাঁহারা আবার মোরাদবাগ ও মোতিঝিলকেও এক বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। ইহাও তাহাদের এম। বেভারিজ প্রথমে উক্ত ভ্রমে পতিত হইয়াছিলেন; পরে স্বীয় ভ্রম সংশোধন

  1. অর্মে সাহেব লিখিয়াছেন যে, রাজা রাজবল্লভের সহিত ঘসেটী বেগমের অবৈধ প্রণয় ছিল। (Orme's Indostan, Vol. II, p. 40.)। কিন্তু ইহা অসঙ্গত বলিয়া বোধ হয়। হোসেনকুলী খাঁর সহিত ঘসেটির ঐরূপ প্রণয় সংঘটিত হইয়াছিল। বোধ হয়, অর্মে শ্রমক্রমে হোসেনকুলীর স্থলে রাজবল্লভকে নির্দেশ করিয়াছেন। হোসেনকুলী খাঁর পর মীর নজর আলি নামে এক ব্যক্তি ঘসেটির হৃদর অধিকার করে।