পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১১০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

ভগ্নদশায় পতিত। ইহার উপকরণ লইয়া মধ্যস্থিত অনেক প্রাসাদ ও অন্যান্য লোকের অনেক অট্টালিকাদি নির্মিত হইয়াছিল।[১] জাফরাগঞ্জের পর পারে অদ্যাপি তাহার কিছু কিছু চিহ্ন রহিয়াছে; কেবল তাহার পোস্তার কিয়দংশ ও একটি পয়ঃপ্রণালীর নিদর্শন ভাগীরথীর জলাপসরণে এখনও দেখিতে পাওয়া যায়। সিরাজউদ্দৌলার প্রাসাদকে সাধারণে লালকুঠি বলিত। সে প্রাসাদের অধিকাংশই বিলুপ্ত; কেবল এম্‌তাজ মহাল-নামক চত্বরের ভিত্তির কিঞ্চিৎ ভগ্নাবশেষ আজিও বর্তমান আছে। পশ্চিম পার্শ্বের ভিত্তিটি সম্পূর্ণ আছে। পূর্ব পার্শ্বের সমস্ত ভিত্তি উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২৫ হস্ত হইবে, পূর্বপশ্চিমেও সম্ভবতঃ তাহাই ছিল; কিন্তু ভাগীরথীস্রোতে ভাঙ্গিয়া যাওয়ায়, এক্ষণে কেবল উত্তর-দক্ষিণে, দুই পার্শ্বেই প্রায় ৭৫ হস্ত মাত্র অবশিষ্ট আছে। এই চত্বরের মধ্যস্থলে একটি গৃহের ভিত্তি অদ্যপি বিরাজমান আছে, তাহা দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সমান ও প্রায় ৩০ হস্ত হইবে। এই সকল ভিত্তি এক্ষণে নিবিড় জঙ্গলে আবৃত, আম্র প্রভৃতি দুই-একটি বৃহৎ বৃক্ষও তাহদের উপর জন্মগ্রহণ করিয়াছে। দুই-একটি পথশ্রান্ত পক্ষী সময়ে সময়ে সেই সকল বৃক্ষের শাখায় বসিয়া সিরাজের সাধের ভবনের ভগ্নাবশেষ দেখিবার জন্য বিষাদপূর্ণ কষ্ঠে পথিকদিগকে আহবান করিয়া থাকে।

 সিরাজউদ্দৌলার সমস্ত চিহ্নই প্রায় মুর্শিদাবাদ হইতে লয় পাইয়াছে; কেবল ভাগীরথীর পূর্বতীরে তাহার নিমিত মদীনাটি ও সিরাজউদ্দৌলার বাজার প্রভৃতি দুইএকটি স্থান অদ্যাপি তাহার ক্ষীণ স্মৃতি আনয়ন করিয়া দেয়। আমরা পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, হীরাঝিলের প্রাসাদনির্মাণের সময় আলিবর্দী খাঁ সিরাজউদ্দৌলার জন্য একটি গঞ্জ স্থাপিত করিয়া দেন এবং তাহার নাম মনসুরগঞ্জ হয়। যে-স্থলে গঞ্জটি স্থাপিত হইয়াছিল, আদ্যাপি তাহাকে মনসুরগঞ্জ বলে। মনসুরগঞ্জ আজিমগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন হইতে প্রায় এক ক্রোশ দক্ষিণে এবং হীরাঝিলের ভগ্নাবশেষ হইতেও বড় অধিক দূর নহে। হীরাঝিল হইতে প্রায় অর্ধ ক্রোশ উত্তরে মোরাদবাগ অবস্থিত ছিল। রেনেলের কাশীমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে হীরাঝিল ও মোরাদবাগ উভয়ের নির্দেশ দেখা যায়। মুর্শিদাবাদের মধ্যে মোরাদবাগ ও মোতিঝিল ইংরেজদিগের প্রিয় বাসস্থান ছিল; পলাশীর যুদ্ধের পর ক্লাইব মোরাদবাগে আসিয়া অবস্থান করেন। মীরজাফরের পুত্র মীরণ এইখানে তাহার অভ্যর্থনায় নিযুক্ত ছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিংস মুর্শিদাবাদের রেসিডেন্ট নিযুক্ত হইয়া মোরাদবাগেই বাস করিয়াছিলেন। মীরজাফরকে অপসারিত করিয়া মীর কাসেমের হস্তে রাজ্যভার দিবার জন্য ভান্সিটার্ট মোরাদবাগেই আসিয়া বাস করেন।

 হীরাঝিলের অব্যবহিত দক্ষিণে একটি ভবনের কিছু কিছু চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। তথায় একটি গৃহের ভিত্তি ও দেওয়ালের ভগ্নাবশেষ অদ্যাপি বিদ্যমান আছে।

  1. Mutaqherin, Trans., Vol. II, Note, p. 28.