পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

ফরাসডাঙ্গা হইতে যাত্রা করিয়া অপরাহ্ণ চারি ঘটিকার সময় মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন।[১] ১৭৮৮ খ্রীঃ অব্দে মুর্শিদাবাদ কারবালা হইতে ফরাসডাঙ্গা পর্যন্ত ভাগীরথীর একটি খাল নিখাত হওয়ায়[২] নদীর গতি পরিবর্তিত এবং তন্নিবন্ধন কাশীমবাজার প্রভৃতি স্থানের নিম্নস্থ ভাগীরথীর অংশ বদ্ধ বিলে পরিণত হয়; এই কারণেই ভীষণ মহামারী উপস্থিত হইয়া উক্ত স্থানসমূহকে মহাশ্মশানে পরিণত করে।

 খ্রীস্টীয় সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে কাশীমবাজারের নাম ইউরোপখণ্ডে বিস্তৃত হয়। ভাগীরথীর যে-অংশ পদ্মা হইতে নিঃসৃত হইয়া জলঙ্গীর সহিত মিলিত হইয়াছে, সেই ভাগকে সচরাচর ইউরোপীয়গণ কাশীমবাজার-নদী নামে অভিহিত করিতেন এবং পদ্মা, ভাগীরথী ও জলঙ্গীর মধ্যস্থিত ত্রিকোণ ভূভাগ ‘কাশীমবাজার দ্বীপ’ আখ্যাপ্রাপ্ত হইয়াছিল।[৩] মেজর রেনেল কাশীমবাজার দ্বীপ নাম দিয়া উক্ত ত্রিকোণ-ভূভাগের একখানি মানচিত্র অঙ্কিত করিয়াছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে উক্ত মানচিত্র অঙ্কিত হয়, তাহাতে সৈয়দাবাদ-ফরাসডাঙ্গা হইতে কাশীমবাজারের নিম্ন দিয়া মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত ভাগীরথীর বক্রগতিই নদীর প্রবাহরূপে নির্দেশিত হইয়াছে।[৪] রেনেলের মানচিত্র হইতে অষ্টাদশ শতাব্দীর অনেক স্থানের অবস্থান সুন্দররূপে অবগত হওয়া যায়। কাশীমবাজার-নদীর সঙ্কীর্ণতার কথা বহুদিন হইতে প্রচলিত রহিয়াছে। ১৬৬৬ খ্রীঃ অব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বার্নিয়ারটেভার্নিয়ার সূতীতে পঁহুছিলে, বার্নিয়ার জলপথে আসায় অসুবিধাবোধে স্থলপথে কাশীমবাজারে উপস্থিত হন। টেভার্নিয়ার ইহাকে একটি ক্ষুদ্র খাল বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। হেজেস ১৬৮৬ খ্রীঃ অব্দের এপ্রিল মাসে নদীয়া হইতে মহুলায় উপস্থিত হইয়া, জলপথে আসিতে না পারিয়া স্থলপথেই কাশীমবাজারে আগমন করেন।[৫] হলওয়েল কলিকাতা হইতে মুর্শিদাবাদে আসার সময় জলাভাবে বজরা পরিত্যাগ করিয়া একখানি ক্ষুদ্র ডিঙ্গি-নৌকার সাহায্যে মুর্শিদাবাদাভিমুখে অগ্রসর হইতে বাধ্য হন।[৬] বরাবর সঙ্কীর্ণ থাকিলেও ভাগীরথীর এমন দুর্দশা আর কখনও ঘটে নাই।

  1. Holwell's India Tracts. p. 272.
  2. Proceedings of the Board of Revenue.
  3. Orme's Indostan (Madras Reprint) Vol. II. p. 2.
  4. যাহাকে এক্ষণে লোকে কাটীগঙ্গা বলে, সেই কাটীগঙ্গাই নদীর প্রাচীন প্রবাহ ছিল। তখন ভাগীরথী মুর্শিদাবাদ-কারবালা হইতে সৈয়দাবাদ-ফরাসডাঙ্গা পর্যন্ত এরূপ ঋজুগতি অবলম্বন করেন নাই। ১৭৮৮ খ্রীঃ অব্দে খাল নিখাত হওয়ায় ঐরূপ পরিবর্তন হয়। কাটীগঙ্গাই নদীর প্রাচীন প্রবাহ ছিল, গঙ্গার নূতন প্রবাহস্থান খনিত হওযায় তাহার পূর্বদিকের ভূভাগকে মহাল কাটীগঙ্গা বলিত। গঙ্গার প্রাচীন প্রবাহ উক্ত মহালের অন্তর্গত হওয়ায় তাহাকে জলকর কাটীগঙ্গা বলা হইত। এক্ষণে উক্ত প্রাচীন প্রবাহের সাধারণ নাম সেইজন্য কাৰ্টীগঙ্গা হইয়া উঠিয়াছে।
  5. Calcutta Review, April 1892.
  6. Holwell's India Tracts, p. 269.