পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, কাশীমবাজার বহু পূর্ব হইতেই নিম্নবঙ্গের প্রসিদ্ধ বাণিজ্য-স্থান বলিয়া পাশ্চাত্য জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ১৬৩২ খ্রীঃ অব্দে ব্রুটান-নামক জনৈক ইউরোপীয় ইহাকে রেশম ও মসলিনের প্রধান বন্দর বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন; তাঁহার বর্ণনায় কাশীমবাজারে ভিন্ন ভিন্ন ইউরোপীয় জাতির কুঠীর উল্লেখ দেখা যায়। ১৬৫৮ খ্রীঃ অব্দে জন কেন বার্ষিক ৪০ পাউণ্ড বেতনে কাশীমবাজার ইংরেজ কুঠীর প্রথম অধ্যক্ষ এবং জব চার্ণক তাঁহার সহকারী নিযুক্ত হন। এই চার্ণকই কলিকাতার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। ১৬৮০ খ্রীঃ অব্দে চার্ণক কাশীমবাজার কুঠীর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হইয়াছিলেন। ১৬৮৬ খ্রীঃ অব্দে নবাব শায়েস্তাখাঁর কঠোর আদেশে বাঙ্গলার অন্যান্য স্থানের ন্যায় কাশীমবাজার কুঠীও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ইহার পর ইংরেজরা পুনর্বার বাঙ্গলায় বাণিজ্য করিবার আদেশ প্রাপ্ত হইলে, কাশীমবাজার কুঠীর পুননির্মাণ হয়। সিরাজউদ্দৌলা যৎকালে কাশীমবাজার কুঠী আক্রমণ করেন, তৎকালে ওয়াট্স্ রেসিডেণ্টের ও ওয়ারেন হেস্টিংস একজন সামান্য কর্মচারীর কার্য করিতেন।[১] কাশীমবাজার পূর্বে অগণ্য অট্টালিকায় পরিপূর্ণ ছিল। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, ইহার পরস্পরসংলগ্ন গগনস্পর্শী অট্টালিকার জন্য রাজপথে সূর্যালোক প্রবেশ করিতে পারিত না এবং দুই-তিন ক্রোশব্যাপিনী সৌধমালার অগ্রভাগ দিয়া লোকে অনায়াসে যাতায়াত করিতে পারিত। ইহার পূর্ব বিবরণ এক্ষণে আরবের উপন্যাস বলিয়া বোধ হয়। কয়েকটি সমাধিক্ষেত্র ব্যতীত ইহার পূর্ব নিদর্শন কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না।
কাশীমবাজারের প্রাচীন কালের চিহ্নের মধ্যে একটি জৈন মন্দির মুর্শিদাবাদের জৈন মহাজনদিগের যত্নে অদ্যপি সুরক্ষিত রহিয়াছে। লোকে এই মন্দিরকে নেমিনাথের মন্দির বলিয়া থাকে। ভিন্ন ভিন্ন ইউরোপীয় বণিকদিগের ন্যায় কাশীমবাজার অনেক দেশীয় মহাজনের আবাসস্থানেও পরিপূর্ণ ছিল। যে-স্থানে নেমিনাথের মন্দির অবস্থিত, তাহার নাম মহাজনটুলি। ইহার চতুর্দিকে ভিন্ন ভিন্ন দেশীয় মহাজনগণ বাস করিতেন। নেমিনাথের মন্দিরের সম্মুখে জগৎশেঠদিগের একটি ব্যবসায়-ভবন অদ্যাপি বর্তমান রহিয়াছে।[২] যতদিন হইতে কাশীমবাজার বাণিজ্যস্থল বলিয়া কথিত, ততদিন হইতে নেমিনাথ-মন্দিরের প্রতিষ্ঠা। মন্দিরটি পশ্চিমমুখে অবস্থিত। প্রবেশদ্বার দিয়া একটি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হইয়া দক্ষিণমুখে আর একটি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করিতে হয়। সেই প্রাঙ্গণের পূর্বদিকে মন্দির, মন্দিরের সম্মুখে একটি বারাণ্ডা এবং উত্তর, দক্ষিণ উভয় পাশ্বে দুইটি দালান, পশ্চাতে একটি সঙ্কীর্ণ পথ আছে, সেই পথের মধ্যস্থলে মন্দিরের নিম্ন দিয়া প্রাঙ্গণ পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ গিয়াছে, সুড়ঙ্গের