পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
লুৎফ উন্নেসা
১২৫

ভূতলশায়িনী হইয়া পড়িতেন এবং অশেষ প্রকার করুণোদ্দীপক ক্রিয়া সম্পন্ন করিয়া শোকভারের লঘুতা সম্পাদনার্থ চেষ্টা পাইতেন।[১] এইরূপে স্বামীর সমাধি পূজা করিতে করিতে, অন্তিমকাল উপস্থিত হইলে লুংফ উন্নেসা স্বামীর চরণে মনোনিবেশ করিয়া তাহারই পদতলে চিরদিনের জন্য সমাহিত হইলেন। আজিও খোসবাগে সিরাজের পদতলে তাহার সমাধি বর্তমান রহিয়াছে। খোসবাগের বৃক্ষরাজির নিবিড় ছায়াতলে প্রকোষ্ঠমধ্যে তাঁহারা অনন্ত বিশ্রাম লাভ করিতেছেন, বিশ্বজননী বসুন্ধরার বিশাল অঙ্গের একদেশে তাঁহারা চিরনিদ্রায় অভিভূত। যাঁহারা জীবনে প্রভূত দুঃখ ও কষ্টে ক্ষতবিক্ষতহৃদয় হইয়া এক্ষণে বিশ্রাম লাভ করিতেছেন, তাঁহাদের সে বিশ্রামে ব্যাঘাত উৎপাদন করা যুক্তিসঙ্গত নহে। অনন্ত বিশ্রামে তাঁহারা চিরশান্তি লাভ করুণ।

 উপরিলিখিত দুই-একটি ঘটনা হইতে সাধারণে লুংফ উন্নেসার অলোকসামান্য চরিত্রের কথঞ্চিৎ পরিচয় পাইবেন। ইতিহাসে তাহার কোনরূপ উজ্জ্বল চিত্র নাই; কিন্তু তাঁহার জীবনের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ঘটনা মিলিত করিলে, আমরা তাহারই মধ্য হইতে সে চরিত্রের অনেকটা আভাস বুঝিতে পারি। প্রচলিত ইতিহাসে সিরাজউদ্দৌলার মহিষীর উজ্জ্বল চিত্র থাকা সম্ভবপর নহে; সুতরাং আমাদের মনে তাহা সুন্দরবৃপে প্রতিভাত হইলেও, ঘটনাভাবে অধিকতর সুস্পষ্ট করা কঠিন।

  1. Forster নামে একজন সাহেব লুংফ উন্নেসার এইরূপ শোকপ্রকাশের কথা ১৭৮২ খ্রীঃ অব্দের ৩১শে আগস্ট তারিখে লিখিত একখানি পত্রে উল্লেখ করিয়াছেন। (Journey from Bengal to England. I. 10.)