পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পলাশী
১২৯

উদ্যান ছিল বলিয়া, পলাশীপ্রান্তরের কোন কোন স্থানকে অদ্যাপি লাখবাগ বলিয়া থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর আম্রকুঞ্জ সেই লাখবাগেরই অন্তর্গত ছিল। পলাশীপ্রান্তর উত্তর-দক্ষিণে প্রায় দুই ক্রোশ ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় এক ক্রোশ হইবে। এই প্রান্তরের মধ্যে মধ্যে এক্ষণে গ্রামের পত্তন হইয়া ইহার বিস্তৃতি লাঘব করিয়াছে। ভাগীরথীও ইহার কিয়দংশ স্বীয় গর্ভস্থ করিয়া কিছু কিছু চররূপে উদগীরণ করিয়াছেন।

 মুর্শিদাবাদের দক্ষিণে পলাশীর ন্যায় আর বিস্তৃত প্রান্তর নাই। এইজন্য এইখানে অষ্টাদশ শতাব্দীর মহাসমর সংঘটিত হয়। ১৭৫৭ খ্রীঃ অব্দের ২৩-এ জুন, হিজরী ১১৭০ অব্দের ৫ই সওয়াল বৃহস্পতিবার নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ইংরেজদিগের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হইয়াছিল। ইংরেজ বণিগগণ বাণিজ্যের আশায় ভারতবর্ষে আসিয়া দেশীয় রাজগণের অকর্মণ্যতাবশতঃ আপনাদিগের রাজ্যলাভের পিপাসা বধিত করিতে থাকেন। বাঙ্গলার সুচতুর দূরদর্শী নবাব আলিবর্দী খাঁ তাহা সম্যগরূপে বুঝিতে পারিয়া, মৃত্যুকালে স্বীয় দৌহিত্র ও উত্তরাধিকারী সিরাজউদ্দৌলাকে ইংরেজদিগের দমনর্থ উপদেশ দিয়া যান।[১] সিরাজের মাতৃত্ব ও জ্যেষ্ঠতাতপত্নী ঘসেটী বেগম বরাবরই সিরাজের বিরুদ্ধাচরণে প্রবৃত্ত ছিলেন। তিনি গোপনে ইংরেজদিগের সহিত যোগ দিয়া সিরাজের অনিষ্ট সাধনের ইচ্ছা করেন। ঘসেটীর দেওয়ান রাজা রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভ সপরিবারে কলিকাতায় ইংরেজদিগের আশ্রয় লইলে, সিরাজ তাহাদিগকে তাহার হস্তে অর্পণ করিবার জন্য কলিকাতার গবর্নর ড্রেক সাহেবের নিকট লোক প্রেরণ করেন। ইংরেজের নবাবের অনুবোধ অগ্রাহ্য করিলে, তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া ইংরেজদিগের কাশীমবাজার কুঠি ও কলিকাতা অধিকার করিয়া বসেন। তাহার কর্মচারিগণের অসাবধানতায় ইংরেজ-দুর্গের অন্ধকূপ নামে একটি ক্ষুদ্র কারাগৃহে আবদ্ধ হইয়া কয়েক জন ইংরেজ প্রাণত্যাগ করে। পরবর্তী কালে ইংরেজেরা তাহাকে অন্ধকূপহত্যাকাণ্ড নাম প্রদান করিয়া, একটি অতিরঞ্জিত কাহিনী লোকসমাজে প্রচার করিয়াছিলেন। এই অন্ধকুপহত্যাসম্বন্ধে অনেক রহস্য আছে, স্থানান্তরে তাহার উল্লেখ করা যাইবে।

 কলিকাতার ইংরেজদিগের দুরবস্থাশ্রবণে মাদ্রাজ হইতে আডমিরাল ওয়াটসন ও কর্নেল ক্লাইব ইংরেজদিগের রক্ষার জন্য বাঙ্গলায় আসিয়া উপস্থিত হন। তাহার কলিকাতা পুনরাধিকার করিয়া হুগলী অধিকার করিলে, নবাব তাহাদিগকে বাধা প্রদানের জন্য পুনর্বার কলিকাতায় উপস্থিত হইলেন। ক্লাইবের রণকৌশলে নবাব পরাজিত হইয়া ১৭৫৭ খ্রীঃ অব্দের ৯ই ফ্রেব্রুয়ারী এক সন্ধিপত্র লিখিয়া দেন। ইহাতে নবাব ইংরেজদিগের প্রতি কোনরূপ অত্যাচার করিবেন না বলিয়া স্বীকার করেন এবং তাহাদিগের ক্ষতিপূরণে প্রতিশ্রুত হন। ইংরেজেরাও বণিকের ন্যায়

  1. Holwell's India Tracts, pp. 32-33.