পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৩০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

ব্যবসায় চালাইবেন, নবাবের রাজ্যে গোলযোগ ও শান্তিভঙ্গ করিবেন না বলিয়া অঙ্গীকার করেন। সিরাজ সন্ধির শর্ত রক্ষা করিতে যথেষ্ট যত্ন পাইয়াছিলেন। কিন্তু ক্লাইব সাহেবের ইচ্ছ৷ অন্যরূপ ছিল। শান্তির অপেক্ষা তাহার হৃদয়ে যুদ্ধের পিপাসা বলবতী থাকায়, তিনি ইউরোপে ইংরেজ ও ফরাসীদিগের মধ্যে যুদ্ধারম্ভের ছলে, ফরাসীদিগের চন্দননগর অধিকার করিতে ইচ্ছা করিলেন। রাজ্যমধ্যে পুনর্বার যুব্ধানল প্রজ্বলিত হইলে, নবাব শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় ইংরেজদিগকে চন্দননগর আক্রমণ করিতে নিষেধ করিয়া পাঠাইলেন। ইংরেজেরা নবাবের কথায় কর্ণপাত করিলেন না। তাহার৷ হুগলীর ফৌজদার নন্দকুমারকে হস্তগত করিয়া, চন্দননগর অধিকার করিতে অগ্রসর হইলেন। নবাব নন্দকুমাবকে ফরাসীদিগের সাহায্যের জন্য লিখিয়া পাঠাইয়া, রাজা দুর্লভরামকে সসৈন্যে হুগলীতে পাঠাইয়া দিলেন। নন্দকুমার স্বয়ং ফরাসীদিগের সাহায্য করিলেন না, অধিকন্তু রাজা দুর্লভরামকেও ফিরিয়া যাইতে বলিলেন। ইংরেজের অবশেষে চন্দননগর অধিকার করিয়া বসিলেন। ফরাসীরাও এই আক্রমণে আপনাদিগের যথাসাধ্য বিক্রম প্রদর্শন করিয়াছিলেন।

 নবাব দুর্লভরামকে সসৈন্যে পলাশীতে অবস্থান করিতে আদেশ দিলে, দুর্লভরাম আপনার সৈন্য লইয়া পলাশী-প্রান্তরে আসিয়া শিবির সন্নিবেশ করিলেন। এই সময়ে সিরাজের বিরুদ্ধে এক ভীষণ ষড়যন্ত্র চলিতেছিল। জগৎশেঠ, মীরজাফর, রায়দুর্লভ প্রভৃতি তাহার অধিনায়ক। ইয়ার লতিফ খাঁ নামে নবাবের একজন সেনাপতি নবাবীপ্রাপ্তির আশায় ইংরেজদিগের সাহায্য প্রার্থনা করেন; মীরজাফরও সেই মর্মে আবেদন করেন। ইংরেজেরা মীরজাফরকে নবাবী দিতে স্বীকৃত হন; কিন্তু ইয়ার লতিফকেও আশ্বাস দিয়া ভুলাইয়া রাখিতে রুটি করেন নাই। ইংরেজের। নবাবকে পলাশীপ্রান্তর হইতে সৈন্য ফিরাইয়া লওয়ার জন্য লিখিয়া পাঠাইলে, নবাব প্রথমে স্বীকৃত হন, কিন্তু অবশেষে ইংরেজদিগের দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারি, তাহাদের কথায় কর্ণপাত করেন নাই। ক্লাইবও চতুরতাপূর্বক নবাবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইতেছেন বলিয়া লিখিয়া পাঠাইলেন। যখন উভয় পক্ষের উদ্দেশ্য প্রকাশিত হইয়া পড়িল, তখন উভয় পক্ষই পলাশী প্রান্তরাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিল। ইংরেজ-সৈন্য পলাশীর দিকে যাত্রী করিয়া ১৬ই জুন পাটুলীতে উপস্থিত হয়। অনন্তর ১৭ই জুন কাটোয়াতে উপনীত হইয়া, কাটোয়া অধিকারপূর্বক তথায় ২২শে পর্যন্ত অপেক্ষা করে। ঐ স্থানেই নবাবকে পলাশীতে আক্রমণ করিবার পরামর্শ স্থির হইল। ২২শে রাত্রিকালে তাঁহারা পলাশীতে উপস্থিত হইয়া আম্রকুঞ্জমধ্যে আশ্রয় লয়। নবাব মীরজাফর প্রভৃতির অভিসন্ধি কিয়ৎপরিমাণে বুঝিতে পারিয়াছিলেন; কিন্তু সে সময়ে মীরজাফরের সহিত মিলন করিয়া প্রথমে তাহাকেই পলাশী অভিমুখে যাইবার আদেশ দেন। বলা বাহুল্য, মীরজাফর নিজে মৌখিক সত্তাব প্রদর্শন করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করাই তাহার একমাত্র উদ্দেশ্য হিল। মীরজাফর পলাশী অভিমুখে যাত্রা করিলে, নবাব মুর্শিদাবাদ হইতে প্রথমে