পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

সোপানাবলী সুস্পষ্ট রূপেই দৃষ্ট হয়। মন্দিরমধ্যে নেমিনাথ, পার্শ্বনাথ প্রভৃতি শ্বেতাম্বর জৈন সম্প্রদায়ের চতুর্বিংশতি মহাপুরুষই অবস্থিতি করিতেছেন। নেমিনাথের মন্দির বলিয়া তিনি সর্বোচ্চ আসনে অবস্থিত। নেমিনাথের মূর্তি পাষাণময়ী এবং পার্শ্বনাথের মূর্তি অষ্টধাতু-নির্মিত। দক্ষিণ দিকের একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে দিগম্বর সম্প্রদায়ের কতিপয় দেবমূর্তি দেখিতে পাওয়া যায়। উত্তর দিকের দালানের পর আর একটি প্রাঙ্গণ; তথায় একটি ক্ষুদ্র মন্দিরে জৈনযতিগণের চরণপদ্ম রহিয়াছে। সেই প্রাঙ্গণের একস্থলে জগৎশেঠদিগের বাসভবন মহিমাপুর হইতে নিত্যচন্দ্রজী-নামক জনৈক যতির কষ্টিপাষাণে অঙ্কিত চরণপদ্ম আনিয়া রক্ষিত হইয়াছে। মন্দিরের পশ্চাদ্‌ভাগে অর্থাৎ পূর্বদিকে একটি উদ্যান; উদ্যানসংলগ্ন আর একটি ক্ষুদ্র মন্দিরে শান্তশূর, কুশলগুরু প্রভৃতি যতিগণের চরণপদ্ম অঙ্কিত আছে। উদ্যানের পশ্চাতে একটি পুরাতন পুষ্করিণীর নাম মধুগড়ে; মধুগড়ে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত। মধুগড়ের চতুস্পার্শ্বে জৈন মহাজনদিগের বাসভবন ছিল। চারিদিক সোপানাবলীর দ্বারা পরিশোভিত হইয়া মধুগড়ে সাধারণের আনন্দ বর্ধন করিত। যৎকালে মহারাষ্ট্ৰীয়গণ সমস্ত বঙ্গদেশ লুণ্ঠন করিয়া মুশিদাবাদ পর্যন্ত ধাবিত হয়, সেই সময়ে, মধুগড়ের চতুষ্পার্শ্বের মহাজনেরা আপনাদিগের ধনসম্পত্তি চিহ্নিত করিয়া, তাহার গর্ভে নিহিত করিয়াছিলেন। তাঁহারা অনেকে আপনাদিগের ধনসম্পত্তির উদ্ধার করিতে সক্ষম হন নাই। তদবধি এইরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, যক্ষদেব তৎসমুদায় অধিকার করিয়া ইহার গর্ভে বাস করিতেছেন। কাশীমবাজারের ধ্বংসের সহিত মধুগড়ে পঙ্ক পরিপূর্ণ হইয়া ক্রমে ক্রমে শৈবাল ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের দ্বারা আচ্ছাদিত হয়। সেই আচ্ছাদন এরূপ ঘনীভূত ও কঠিন হইয়াছিল যে, তাহার উপর অনেক বৃক্ষাদিও জন্মে। ইহার গভীরতা অত্যধিক ছিল। একসময়ে একটি হস্তী ইহার পঙ্কে নিমগ্ন হওয়ায়, অনেক কষ্টে তাহার উদ্ধার সাধন হয়। মধুগড়ের চতুর্দিকে এক্ষণে জঙ্গলপরিপূর্ণ ও ক্ষুদ্রকায় কুম্ভীরসকল ইহার গর্ভে বাস করিতেছে; তাহারা প্রায়ই তীরে উঠিয়া নিঃশঙ্কচিত্তে রৌদ্র উপভোগ করিয়া থাকে।

 নেমিনাথের মন্দির ব্যতীত কাশীমবাজার ব্যাসপুরে একটি সুন্দর শিবমন্দির আছে। এই মন্দির ব্যাসপুরের সুপ্রসিদ্ধ পণ্ডিত কৃষ্ণনাথ ন্যায়পঞ্চাননের পিতা রামকেশব-কর্তৃক ১৭৩৩ শক বা ১৮১১ খ্রীঃ অব্দে নির্মিত হয়। মন্দিরমধ্যে এক প্রকাও শিবলিঙ্গ অবস্থিত। মন্দিরটি নানাবিধ দেবদেবীর মূর্তিবিশিষ্ট ইষ্টকদ্বারা নিমিত। বড়নগরস্থ রানী ভবানীর নির্মিত শিবমন্দিরের অনুকরণে ইহার নির্মাণ হইয়াছে বলিয়া বোধ হয়। মন্দিরটি অধিক পুরাতন নয় বলিয়া আজিও দেখিবার উপযোগী আছে। কাশীমবাজারের অর্ধক্রোশ দক্ষিণে বিষ্ণুপুর-নামক স্থানে এক প্রসিদ্ধ কালীমন্দির বিদ্যমান আছে। এই মন্দিরে পূজোপলক্ষে মধ্যে মধ্যে অনেক লোকের সমাগম হইয়া থাকে। বিষ্ণুপুরের কালীমন্দির কৃষ্ণেন্দ্র হোতা নামক জনৈক