পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পলাশী
১৪১

রহিয়াছেন। এইরূপ শুনা যায় যে, ফরীদতলা মুসলমানদিগের একটি প্রসিদ্ধ উপাসনাস্থান বলিয়া, মীরমদন তথায় সমাহিত হইতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন। ফরীদ সাহেবের সমাধির মধ্যে মধ্যে সংস্কার হইয়া থাকে; কিন্তু মীরমদনের সমাধির প্রতি কাহারও তাদৃশ মনোযোগ দেখা যায় না। তাহার সমাধি প্রায়ই অসংস্কৃত অবস্থায় বিরাজ করিয়া থাকে। মুর্শিদাবাদে যেরূপ সিরাজের সমস্ত স্মৃতিচিহ্নের দুর্দশা ঘটিয়াছে, তাঁহার প্রিয় ও বিশ্বাসী সেনাপতি মীরমদনের সমাধির অবস্থাও সেইরূপ। মুসলমানগণ ফরীদ সাহেবের সমাধিসংস্কারের সহিত মীরমদনের সমাধিটির সংস্কার অনায়াসেই করিতে পারেন। মীরমদনের প্রতি কি জন্য তাঁহারা উপেক্ষা প্রদর্শন করেন, বুঝিতে পারা যায় না। যিনি চিরদিন প্রভুভক্ত থাকিয়া, প্রভুর কল্যাণোদেশেই রণক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়াছিলেন, তিনিও যে সাধারণের নিকট সর্বতোভাবে পূজ্য, এ কথা বোধ হয়, নূতন করিয়া বলিবার প্রয়োজন নাই। সম্প্রতি পূর্তবিভাগকর্তৃক তাহ৷ সংস্কার হইতেছে শুনা গিয়াছে। মীরমদনের বীরত্বকাহিনী ও পলাশীযুদ্ধের কথা পলাশী-অঞ্চলে অদ্যাপি গ্রাম্য কবিতায় গীত হইয়া থাকে।[১]

 অষ্টাদশ শতাব্দীর পলাশীপ্রান্তরের অনেক পরিবর্তন ঘটিলেও অদ্যাপি তাহা স্বকীয় বিশাল কায় বিস্তার করিয়া ধূ ধূ করিতেছে। প্রান্তরে প্রায় উত্তমরূপে তৃণাদিও জন্মে না; কোন কোন স্থানে কতকদূর লইয়া তৃণরাশি ও শস্যপুঞ্জের হরিৎ শোভা নয়নের তৃপ্তিসম্পাদন করিয়া থাকে। স্থানে স্থানে দুই-চারিটি বৃক্ষও জন্মগ্রহণ করিয়া, পলাশীর উত্তপ্ত বক্ষঃস্থলে ছায়াপ্রদান করিতেছে। মধ্যে মধ্যে দুই-একখানি ক্ষুদ্র গ্রাম স্থাপিত হইয়া ইহার পূর্ববিস্তৃতির লঘুতা সম্পাদন করিয়াছে। ভাগীরথীতীরস্থ বাঁধটি প্রান্তরের প্রাচীরস্বরূপে অবস্থিত আছে। বাঁধের নীচে কতকটা চরভূমি এবং কতক প্রাচীন প্রান্তর ও নদীর অবশেষ দৃষ্ট হয়। চরের নীচেই ভাগীরথী ধীরে ধীরে প্রবাহিতা হইতেছেন। বর্ষাকালে উক্ত চরভূমি ভাগীরথীসলিলে প্লাবিত হইয়া যায়। পলাশীপ্রান্তরের মধ্যস্থলে এখনও পলাশীযুদ্ধের অনেক গোলাগুলি[২] প্রোথিত হইয়া আছে। ভূমিকর্ষণসময়ে পলাশীপ্রান্তরের বক্ষস্থল বিদীর্ণ হইলে, তৎসমুদায় মানবচক্ষুর গোচরীভূত হইয়া থাকে। যে-সমস্ত ইংরেজ ও ইংরেজললনাগণ পলাশীর নিকট দিয়া জলপথে বা স্থলপথে গতায়াত করিয়া থাকেন, তাহাৱা বিজয়স্তম্ভের নিকট উপস্থিত হইয়া জয়ধ্বনিতে প্রান্তর প্রতিধ্বনিত করিয়া তুলেন। বৃক্ষশাখায় উপবিষ্ট পক্ষিগণ সে ধ্বনিশ্রবণে চমকিত হইয়া কলরব করিতে করিতে দিগদিগন্তে উড়িয়া যায়। বর্তমান সময়েও পলাশীপ্রান্তর ইংলণ্ডীয় নরনারীগণের নিকট তীর্থস্থানরূপে বিরাজ করিতেছে।

  1. উক্ত গ্রাম্য কবিতাটি পরিশিষ্টে দুষ্টব্য।
  2. পলাশীপান্তর হইতে সংগৃহীত পলাশীযুদ্ধের একটি গোল ও একটি গুলি ডাকা রামদাস সেনের পুস্তকালয়ে রক্ষিত হইয়াছে।