পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
খোশ্‌বাগ
১৪৯

তাহারও হত্যাকাণ্ডে মীরাই নেতৃত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন। মীরজাফর সিংহাসনে উপবিষ্ট হইলে, রায়দুর্লভের সহিত তাহার মনোবিবাদ উপস্থিত হয়। মীরজাফর মসনদে বসিলে, আলিবর্দী ও সিরাজের পরিবারবর্গকে বন্দীদশায় বাস করিতে হয়। মির্জা মেহেদীকেও কারাযন্ত্রণা ভোগ করিতে হইয়াছিল। রায়দুর্লভ মির্জা মেহেদীকে কারাগার হইতে মুক্ত করিবার চেষ্টা করিলে, তিনি পাছে মির্জা মেহেদীকে সিংহাসন প্রদান করেন, এই সন্দেহ করিয়া, মীরজাফর মীরণকে তাহার বিনাশের জন্য আদেশ দেন। মীরণ হত্যাকাণ্ডের ব্যবস্থায় বিলক্ষণ পারদর্শী ছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ মির্জা মেহেদীর হত্যার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। তদীয় আদেশানুসারে মির্জা মেহেদীর দুই পার্শ্বে দুই খানি তা বিন্যাস করিয়া সুদৃঢ় রঙ্কুর বেষ্টন দ্বারা সেই তক্তা দুইখানিকে চাপিয়া তাহার প্রাণসংহার করা হয়। এই অদ্ভুত উপায়ে পঞ্চদশবৎসরবয়স্ক বালকের ঈদৃশ নিষ্ঠুর ভাবে হত্যার কথা যে শুনিয়াছিল, তাহারই নয়ন হইতে অশ্রুধারা নিপতিত হইয়াছিল।[১] এই নৃশংস হত্যার পর তাহার মৃতদেহ আনিয়া খোশ্‌বাগে সিরাজের পার্শ্বেই সমাহিত করা হয়।

 সিরাজের দক্ষিণে, তাহার পদতলে, তাহার প্রিয়তমা মহিষী লুৎফ উন্নেসা চিরনিদ্রিতা। স্বামীর মৃত্যুর পর ঢাকায় নির্বাসনযন্ত্রণা ভোগ করিয়া তিনি পুনর্বার মুর্শিদাবাদে আসিয়া খোশ্‌বাগের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হন। পরে অন্তিম কালে স্বামীর পদতল আশ্রয় করিয়া চিরশাস্তি ভোগ করিতেছেন। যিনি কি সুখে, কি দুঃখে, চিরদিনই ছায়ার ন্যায় স্বামীর অনুবর্তন করিয়াছিলেন, তিনি স্বামীর পদতল ব্যতীত আর কোথায় চিরশায়িত থাকিতে পারেন?

 লুৎফ উন্নেসার পূর্ব পার্শ্বে মির্জা মেহেদীর দক্ষিণে আর একটি সমাধি আছে; সাধারণ লোকে তাহাকে মির্জা মেহেদীর বেগমের সমাধি বলিয়া থাকে; কেহ কেহ তাহাকে সিরাজের আর কোন বেগমের সমাধিও বলে। বালক মির্জা মেহেদী বিবাহিত হইয়াছিলেন কিনা, তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না; সুতরাং উক্ত সমাধিটি সিরাজের কোন বেগমের সমাধি হইলেও হইতে পারে। সম্ভবতঃ উহ এমদাৎ উন্নেসার সমাধি হইবে।

 আলিবর্দীর দক্ষিণে যেসমাধিটি রহিয়াছে, সেটি তাহার মহীয়সী বেগমের সমাধি বলিয়া কথিত হয়। ঢাকার নির্বাসন হইতে পলায়নের পর, আর তাহার কোন বিবরণ অবগত হওয়া যায় না। সম্ভবতঃ তিনি তথা হইতে মুর্শিদাবাদে পুনরাগমন করিয়াছিলেন। পরে অভিমসময় উপস্থিত হইলে, স্বামীর পদতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। যিনি আলিবর্দীর জীবনের একমাত্র সঙ্গিনী ছিলেন, অনন্তজীবনে তিনিই সহচরীরূপে বিরাজ করিতেছেন।

  1. Mutaqherin, Vol. II, pp. 8-9. মুতাক্ষরীনকার বলেন যে, কেহ কেহ বলিয়া থাকে যে, মির্জা মেহেদীকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হইয়াছিল; কিন্তু তিনি সবিশেষ অনুসন্ধান করিয়া জানিয়াছিলেন যে, তা চাপিয়াই তাহাকে বধ করা হয়। রিয়াজেও তাহাই আছে।