পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
জাফরাগঞ্জ
১৬১

 নবাব মনসুর আলির মাতা রাইস্ উন্নেসা বেগমের মৃত্যুর পর তাঁহার প্রধান মহিষী শমসজাঁহা বেগম গদিনসীন বেগম হইয়াছিলেন। তিনিও সম্ভ্রান্তবংশের মহিলার ন্যায় আপনার উন্নতহৃদয়ের পরিচয় প্রদান করিতেন। স্বজন ও দীনদুঃখী প্রতিপালন তাঁহার একটি প্রধান ব্রত ছিল। যাবতীয় দেশহিতকর কার্যে তিনি সর্বদা ব্যাপৃত থাকিতেন। যেখানে কোন মঙ্গলকর কার্য উপস্থিত হইত, সেইখানে তিনি মুক্তহস্ততার পরিচয় দিতেন। তাঁহার পুত্র ইস্কান্দর আলি মির্জা বা সাধারণের পরিচিত সুলতান সাহেব অকালে ইহলোক পরিত্যাগ করিয়া মাতার হৃদয় শেলবিদ্ধ করিয়া যান। সুলতান সাহেবের ন্যায় তেজস্বী, অমায়িক ও উদারপ্রকৃতি মহানুভবব্যক্তি সম্ভ্রান্তবংশীয়দিগের মধ্যে অল্পই দৃষ্ট হইয়া থাকে। সম্ভ্রান্ত জনগণ হইতে সাধারণ লোক পর্যন্ত তাঁহার সহিত কথোপকথনে বিমল আনন্দ অনুভব করিত। নবাব-নাজিমের বংশধর বলিয়া তাঁহার মনে কোনরূপ শ্লাঘার উদয় হইত না। তাঁহার সমাধি অদ্যাপি জাফরাগঞ্জে বিরাজ করিয়া দর্শকগণের হৃদয়ে শোকোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করিয়া থাকে। তাঁহার মাতাও এক্ষণে তাঁহারই অনুসরণ করিয়াছেন।

 জাফরাগঞ্জের সমাধিভবনের সম্মুখে পথের অপর পার্শ্বে একটি সুন্দর মস্‌জেদ দৃষ্ট হয়; তথায় উপাসনাদি হইয়া থাকে। এই সমাধিভবনে একতিলও স্থান নাই, সমস্তই সমাধিতে পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে। সমাধিভবনের বন্দোবস্ত ভালই আছে। ইহাতে প্রায় একশত কারী বা কোরানাধ্যায়ী প্রতিদিন সমাধিস্থ মৃত ব্যক্তিগণের নিকট উপস্থিত হইয়া কোরানপাঠে তাঁহাদের আত্মার কল্যাণ সম্পাদন করিয়া থাকেন। এতদ্ভিন্ন নানা কার্যে অন্যান্য অনেক লোকজনও নিযুক্ত আছে। সমাধিভবনের স্থানে স্থানে দুই-চারিটি কুসুম ও অন্যান্য বৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়া গন্ধ ও ছায়া বিতরণে পরলোকগত ব্যক্তিগণের শান্তিসুখের বৃদ্ধি সাধন করিতেছে।



 ১১