পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
উধূয়ানালা
১৬৭

ঘোরতর যুদ্ধ ঘটে; তাহাতে নবাবসৈন্য পরাজিত হইয়া, উধূয়ানালায় উপস্থিত হয়। উধূয়ানালায় পূর্ব হইতেই নবাবের শিবির সন্নিবেশিত হইয়াছিল। পরাজিত সৈন্যগণ সেই শিবিরে আসিয়া আশ্রয় গ্রহণ করে।

 উধূয়ানালার সুন্দর অবস্থানের জন্য মীর কাসেম সেইস্থানে শিবির সন্নিবেশের আজ্ঞা দেন। নবাবশিবির দক্ষিণ-পূর্বদিকে সম্মুখ করিয়া অবস্থিতি করিতেছিল। পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, মীর কাসেমের শিবিরের পশ্চাদ্ভাগে উধূয়ানালা প্রবাহিত হইতেছিল। উধূয়ানালা রাজমহল পর্বতশ্রেণী হইতে বহির্গত হইয়া উধূয়ার নিকট একটি বিলে পড়িয়া পরে গঙ্গার সহিত মিলিত হইয়াছে। নবাব-শিবিরের বাম পার্শ্বে নিজে গঙ্গা পরিখারূপে অবস্থিত, দক্ষিণ পার্শ্বেও কতকগুলি পর্বত প্রাচীররূপে দণ্ডায়মান। শিবিরের সম্মুখভাগে গঙ্গা হইতে পরিখা খনন করিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিম মুখে প্রায় অর্ধক্রোশ দূরে একটি একক পর্বতের অঙ্গে সম্মিলিত করা হইয়াছিল। এই পর্বতটিকে এক্ষণে পীরপাহাড় কহে। পীরপাহাড় হইতে পুনর্বার পরিখা নিখাত হইয়া, তাহা দক্ষিণদিকে পাহাড়ের নিকটস্থ বাদশাহী সড়ক অতিক্রম করিয়া, কতকগুলি পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পীরপাহাড়কে সুরক্ষিত করিয়া তথায় প্রহরী নিযুক্ত করা হইয়াছিল। এই পরিখাকে বিভাগ করিয়া একটি ঝিল বা দাঁড়া বর্ষার জলপ্লাবনে স্ফীত হইয়া পরিখাভ্যন্তরস্থ অনেক ভূভাগ সলিলাবরণে আবৃত করিয়া রাখিয়াছিল। ঐ ঝিলকে এক্ষণে বকাইয়ের দাঁড়া কহে। পরিখার পার্শ্বে মৃৎপ্রাচীর ও বুরুজ নির্মাণ করিয়া তাহাতে প্রায় একশতটি কামান সুসজ্জিত করা হইয়াছিল। মুর্শিদাবাদ হইতে বিহারে গমন করিতে হইলে, তৎকালে একমাত্র সুপ্রসিদ্ধ বাদশাহী সড়ক দিয়া যাইতে হইত। উক্ত সড়ক অষ্টাদশ শতাব্দীতে গঙ্গার তীরেই অবস্থিত ছিল। কিন্তু উধূয়ার দক্ষিণ ও ফুদকিপুর নামক গ্রামের উত্তর হইতে তাহার আর একটি শাখা প্রথমে দক্ষিণ-পশ্চিম, পরে পশ্চিম, অবশেষে উত্তর-পূর্ব মুখে উধূয়ার পর্বতশ্রেণীর নিকট দিয়া রাজমহলে গঙ্গাতীরস্থ প্রধান সড়কের সহিত মিলিত হয়। রেনেলের জঙ্গলতেরাই বিভাগের মানচিত্র হইতে এই বাদশাহী সড়কের সুন্দর অবস্থান বুঝা যায়। মীর কাসেমের শিবির এই উভয় সড়কই অধিকার করিয়া অবস্থিত ছিল। উধূয়ানালা উক্ত সড়ককে বিভক্ত করায়, নবাব কয়েক মাস পূর্বে উধূয়ানালার উপর ইষ্টক ও প্রস্তর দ্বারা এক সেতু নির্মাণ করিয়া রাখেন। নবাবসৈন্যেরা এই সেতুকে অত্যন্ত সুরক্ষিত করিয়াছিল।

 গিরিয়ার পরাজয়বার্তা শ্রবণ করিয়া মীর কাসেম আরাটুন্ নামে একজন আর্মেনীয়ের অধীন ইউরোপীয় রণকৌশলে শিক্ষিত ৪ হাজার সৈন্য ও দেশীয় সেনাপতি মীরনজফ খাঁ, মীরহেম্মত আলি ও মীরমেহেদী খাঁ প্রভৃতির অধীন ১২ হাজার অশ্বারোহী,


৫ Broome's Bengal Army, p. 382.

৬ Mutaqherin Vol. II, p. 266.