পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
উদূয়ানালা
১৭৩

হইয়াছিল, এক্ষণে তাহার অস্তিত্ব নাই; তবে তাহার কিছু চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। মীর কাসেমের বুরুজ ও মৃৎপ্রাচীরের চিহ অদ্যাপি স্থানে স্থানে বিদ্যমান আছে। পরিখা প্রায় পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে, কিন্তু চিহ্ন একেবারে লুপ্ত হয় নাই। প্রসিদ্ধ বাদশাহী সড়ক এক্ষণেও গঙ্গার নিকট ও পর্বতশ্রেণীর নিম্ন দিয়া গিয়াছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর সড়কের কিছু পরিবর্তন ঘটিয়াছে বলিয়া বোধ হয়। এক্ষণে মুর্শিদাবাদ হইতে রাজমহল অভিমুখে যাইতে হইলে, পীরপাহাড় বর্তমান সড়কের দক্ষিণ দিকে পড়ে। উহা হইতে উত্তর-পশ্চিমে কিছু দূরে দুই-একটি ক্ষুদ্র পাহাড় আছে; তাহাদের নাম ডুমুরী ও বাঘপিঞ্জরা পাহাড়; ইহার নিম্ন দিয়া বর্তমান সড়ক চলিয়া গিয়াছে। ডুমুরী পাহাড় নবাব-শিবিরের অন্তর্গত ছিল। ডুমুরী পাহাড়ের দক্ষিণে কিছুদূরে কয়েকটি ক্ষুদ্র পাহাড় দেখিতে পাওয়া যায়; তাহাদিগকে চাতরাডিহি পাহাড় বলে। ডুমুরীর পশ্চাৎ দিয়াই বর্তমান উধয়ানালা প্রবাহিত। ডুমুরীর নিকটেই বকাইয়ের দাড়ার সহিত উধূয়ানালা মিলিত হইয়াছে। ইহার নিকটেই নালার উপরে একটি সেতু। এই সেতুই অষ্টাদশ শতাব্দীতে মীর কাসেম কর্তৃক নির্মিত হইয়াছিল এবং ইহাই সেই যুদ্ধকালীন সেতু। এক্ষণে তাহ৷ ভগ্ন হইয়া গিয়াছে; বর্ষাকালীন উধূয়ার খরস্রোত তাহা চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া ফেলিয়াছে। উধুয়ার একটি তীরে তাহার কতক চিহ্ন আজিও বিদ্যমান রহিয়াছে। সেই সেতু হইতে বৃহৎ বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড বিচ্যুত হইয়া উধূয়াগর্ভে পতিত হইয়াছে; জলাপসরণে সেই সমস্ত প্রস্তরখণ্ড দেখিতে পাওয়া যায়। এখন তাহার যেরূপ চিহ্ন আছে, তাহা দেখিয়া কিরূপ সুদৃঢ়ভাবে উক্ত সেতু নির্মিত হইয়াছিল, তাহা বেশ বুঝিতে পারা যায়। সেই সেতু হইতে উত্তর-পূর্ব দিকে আর একটি সেতু দেখিতে পাওয়া যায়। তাহারও অনেকাংশ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে; অবশিষ্টাংশ অদ্যাপি বিরাজ করিতেছে। ইহা পূর্বোল্লিখিত সেতুর ধ্বংসের পর নির্মিত হইয়াছিল বলিয়৷ কথিত হইয়া থাকে। যে-স্থান দিয়া ইংরেজের৷ প্রথমে কামান দাগিয়াছিলেন, সেস্থানও লোকে নির্দেশ করিয়া থাকে। এক্ষণে তাহাকে জঙ্গলপাড়া কহে। চৌর্যবৃত্তি অবলম্বন করিয়া উধুয়াশিবির আক্রমণ করার কথা ইহার নিকটস্থ স্থানীয় লোকেরা অবগত আছে। ফুদ্কিপুর বা কাঁঠালবাড়ীর যে-স্থানে ইংরেজদিগের পরিখা ও বুরুজ নির্মিত হইয়াছিল, অদ্যাপি তাহাদের চিহ্ন বর্তমান আছে। মীর কাসেমের পরিখা অপেক্ষা ইংরেজদিগের পরিখা অনেক স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। উধূয়ার ভূমি খনন বা কৰ্ষণ করিলে মধ্যে মধ্যে গোলাগুলি পাওয়া গিয়া থাকে।[১]

  1. উধুয়াতে Atkinson Brothers কোম্পানীর একটি পাথরের কুঠি আছে; এই কুঠিতে উধুয়া হইতে যুদ্ধকালীন অনেকগুলি বড় ও ছোট গোলাগুলি সংগৃহীত হইয়াছে। তথায় একটি তিন হাত দীর্ঘ কামানও সংগৃহীত আছে। অনেকে তাহা মীর কাসেমের কারখানার কামান মনে করিয়া থাকেন। গিরিয়াতেও অনেক গোলাগুলি পাওয়া যায়।