পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বড়নগর
১৭৭

মৃত্যুর পর কালু কোঙার অপবয়সে পরলোকগত হইলে, রামকান্ত নাটোরের সমস্ত জমিদারী ও ঐশ্বর্যের অধীশ্বর হন। এই রামকান্তের পত্নীই ভারতবিখ্যাত। প্রাতঃস্মরণীয় মহারানী ভবানী।

 রানী ভবানী রাজশাহী জেলার অন্তঃপাতী ছাতিম গ্রামের আত্মারাম চৌধুরীর কন্যা; তাহার মাতার নাম জয়দুর্গা।[১] নাটোর রাজসংসারে দয়ারাম নামে একজন তিলিজাতীয় কর্মচারী ছিলেন; তাহারই চেষ্টায় নাটোর রাজবংশের অসীম সম্পত্তির সুবন্দোবস্ত হইয়াছিল। দয়ারাম বহুদিন পর্যন্ত নাটোর রাজসংসারে কার্য করিয়াছিলেন। এই দয়ারামই বর্তমান দীঘাপতিয়া রাজবংশের আদি পুরুষ। রামকান্ত বাঙ্গলা ১১৫৩ সালে পরলোকগত হইলে, রানী ভবানী তাহার সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হইয়া, বাঙ্গলার জমিদারদিগের শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়া বসেন। তাহার সমস্ত জমিদারী হইতে প্রায় দেড় কোটি টাকা কর আদায় হইত;[২] তন্মধ্যে ৭০ লক্ষ সরকারের রাজস্ব দেওয়া হইত। অবশিষ্ট প্রায় সমস্তই পুণ্যকার্যে ব্যয়িত হইয়া যাইত। তৎকালে বঙ্গের সমস্ত জমিদারদিগের মধ্যে নাটোরবংশের আয় সর্বাপেক্ষা অধিক ছিল।

 রানী ভবানীর ৩২ বৎসর বয়সে বৈধব্যদশা উপস্থিত হয়। তাহার তারা নাম্নী একটিমাত্র কন্যা ছিল। অন্য কোন সন্তান জীবিত ছিল না। অল্পবয়সে বৈধব্য অবস্থায় পতিত হইয়া রানী ভবানী হিন্দু রমণীর অবশ্য কর্তব্য ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করিয়া সমস্ত জীবন অতিবাহিত করিয়াছিলেন। রানী ভবানীর নূতন পরিচয় দিবার বিশেষ কোন প্রয়োজন নাই। দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা, দীন প্রতিপালন, জলাশয় খনন, বৃক্ষপ্রতিষ্ঠা প্রভৃতি পুণ্যকার্যের জন্য যাহার নাম বঙ্গের গৃহে গৃহে প্রবাদবাক্যের ন্যায় বিরাজ করিতেছে, কাশী গয়া প্রভৃতি তীর্থস্থানসমূহে যাহার অক্ষয়কীতি দেদীপ্যমান। রহিয়াছে, যাহার প্রদত্ত ব্রহ্মোত্তর না পাইলে, তৎকালে কোন ব্রাহ্মণসন্তান ব্রাহ্মণ বলিয়াই গণ্য হইত না, তাহার আর নৃতন পরিচয় কি দিব? তাহার সমগ্র পুণ্যকাহিনী এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধের কলেবর ধারণ করিতে কদাচ সমর্থ হইবে না; কেবল বড়নগরের সহিত তাহার যে-সমস্ত কীর্তি সংসৃষ্ট, তাহারই সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদত্ত হইতেছে।

 রানী ভবানী রাজশাহী জেলার অন্তর্গত খাজুরাগ্রামনিবাসী রঘুনাথ লাহিড়ী নামে জনৈক ব্রাহ্মণতনয়ের সহিত স্বীয় কন্যা তারার বিবাহ প্রদান করেন; কিন্তু রঘুনাথও অল্পবয়সে তারাকে চিরব্রহ্মচারিণী ও ভবানীর বক্ষে শেল বিদ্ধ করিয়া পরলোকগত হন। রানী ভবানীকে অগত্যা একটি দত্তকপুত্র গ্রহণ করিতে বাধ্য হইতে হয়। এই দত্তকপুত্রই বঙ্গের সাধকচূড়ামণি রাজযোগী রামকৃষ্ণ। যিনি রাজা হইয়াও সন্ন্যাসীর

  1. বড়নগর অঞ্চলে তিনি কস্তুরী নামে অভিহিত হইয়া থাকেন।
  2. Holwell's Interesting Historical Events, Pt. I, p. 192. ১২