পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৮৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

উভয়েই ভাগীরথী হইতে উত্থিত হইয়াছিলেন। মন্দিরের বারান্দায় হলহলি কলকলি নামে দুইখও সিন্দূরলেপিত প্রস্তরখণ্ড আছে। অদ্যপি পীড়াশাস্তির জন্য মুর্শিদাবাদের অনেক স্থান হইতে লোকজন সমাগত হইয়া হলহলি কলকলির পূজা দিয়া থাকে।

  গণেশের মন্দির হইতে উত্তর দিকে মঠবাট। মঠবাটীর ঠাকুরের রানী ভবানীর গুরুবংশ বলিয়া প্রসিদ্ধ। মঠবাটতে এক যোড়বাঙ্গলা আছে; তাহারও ইষ্টকে শিপকার্যের পরিচয় পাওয়া যায়। যোড়বাঙ্গলায় তিনটি শিব বিরাজিত আছেন, তাহারাও রানী ভবানীর প্রতিষ্ঠিত। ইহার নিকটে কন্তুরীশ্বর শিব; তিনি রানী ভবানীর মাতার স্থাপিত বলিয়া প্রসিদ্ধ। মঠবাটতে একটি প্রকাও তোরণদ্বার আপনার বিশাল মস্তক উত্তোলন করিয়া অদ্যাপি ভাগীরথীতীরে অবস্থিত আছে।

 মঠবার্টীর উত্তরে দয়াময়ীবাট। দয়াময়ী পাষাণময়ী কালীমূতি। একটি উচ্চ বেদীর উপর তিনি অবস্থিত। তাঁহার মনোহারিণী মূতি দর্শন করিলে পাষাণেরও মনে ভক্তির উদয় হইয়া থাকে। পূর্ণানন্দ ও ব্রহ্মানন্দ নামে রাজা রামকৃষ্ণের পরমমিত্র দুইজন সন্ন্যাসীর কথা শুনা যায়। দয়াময়ী ব্রহ্মানন্দের স্থাপিত বলিয়। কথিত। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, পুষ্করিণী খননের সময় তিনি উত্থিত হইয়াছিলেন। দয়াময়ী মন্দিরটি সংস্কৃত করিয়া অধিকতর রমণীয় করা হইয়াছে। মঠবাটীর ঠাকুর তারিণীশঙ্কর ইহার সংস্কার করিয়াছেন। দয়াময়ীর বাটীর উত্তরে দেওয়ান দয়ারামের স্থাপিত এক গোপালমূতি আছেন। এতদ্ভিন্ন বড়নগরের অরণ্যমধ্যে অনেক শিবমন্দির দেখিতে পাওয়া যায়। রাজা রামকৃষ্ণ যে-শবে বসিয়া সাধন করিতেন, একটি খজুরবৃক্ষের তলায় তাহা প্রোথিত আছে বলিয়া বড়নগরের লোকের গল্প করিয়া থাকে।

 বড়নগরের পরপারে সাধকবাগ। তথায় প্রসিদ্ধ মস্তারাম বাবাজীর আখড়া আছে। এই আখড়ায় রথযাত্র-উপলক্ষে মহাসমারোহ হইয়া থাকে। পূর্বে এই উপলক্ষে অত্যধিক ধুমধাম হইত। নানাস্থান হইতে বহুলোকের সমাগম হইয়া ধুমধামের মাত্র অধিকতররূপে বাড়াইয়া তুলে। আখড়ার রামচন্দ্রদেবই প্রসিদ্ধ।

 পূর্বে বলা হইয়াছে যে, রানী ভবানী রানী জয়মণিকে সমস্ত দেবসেবার সম্পত্তি দানপত্র দ্বারা অপণ করিয়া যান। জয়মণি কুমার দুর্গচন্দ্রকে পোষ্যপুত্র গ্রহণ করেন। দানপত্রের লিখনদোষে দুর্গাচন্দ্রের সহিত নাটোরবংশের মোকর্দমা উপস্থিত হয়। সেই মোকর্দমার শেষে দেবসেবার সম্পত্তি তিন ভাগে বিভক্ত হইয়া এইরূপ নিদিষ্ট হইয়াছে। নাটোরবংশীয়েরা, রাজরাজেশ্বরীর, বড়নগরের কুমার তারার, গোপালের ও মঠবার্টীর ঠাকুরের সমস্ত শিবের সেবক বলিয়া নিদিষ্ট হইয়াছেন। রাজরাজেশ্বরী ও গোপালের সেবার বন্দোবন্ত মন্দ নাই। ক্ষুধার্ত ব্যক্তি মাত্র উপস্থিত হইলে, রাজরাজেশ্বরীর বাটতে প্রসাদ পাইয়া থাকে। শিবগুলির প্রতি বিশেষ কোন যত্ন দেখা যায় না। রাজরাজেশ্বরীর সেবার বন্দোবস্ত থাকিলেও তাহ নাটোরবংশের উপযোগী