পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
১৮৯

থাকিবেন, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। ইংরেজ লেখকগণের অথবা বর্তমান সময়ে কোন কোন বাঙ্গালী ইংরেজী লেখকের সহস্র গালিবর্ষণেও মহারাজ নন্দকুমারের গৌরবের লাঘব হইবে না। কেহ কেহ তাঁহাকে সমগ্র বাঙ্গালীজাতির ঘৃণ্য বলিয়া নির্দেশ করিতে কুষ্ঠিত হন নাই। তাঁহাদের কথা সম্পূর্ণ সত্য বলিয়া বিশ্বাস হয় না। যাহারা স্বার্থপরতার বশবর্তী হইয়া কোম্পানীর কর্মচারিগণের পাদুকাবহনে আপনাদিগকে কৃতার্থম্মন্য মনে করিয়াছিল, তাহারাই মহারাজ নন্দকুমারের চরিত্রে কলঙ্কবিন্যাসের চেষ্টা পাইয়াছে। তাঁহার পরম শত্রু ইংরেজগণের লেখনীভঙ্গিতে তাহা সাধারণের চক্ষে ভয়াবহ বলিয়াই সহসা বোধ হইয়া থাকে। কিন্তু তাঁহার জীবনের ঘটনাবলীর আলোচনা করিলে, সে ভ্রম অনায়াসে দূরীভূত হয়। মহারাজ নন্দকুমারের চরিত্র যে একেবারে নির্মল ছিল, সে কথা আমরা বলিতেছি না; তাহাতে, স্বার্থ ও উচ্চ আশার মিশ্রণ থাকিতে পারে; কিন্তু ইংরেজ লেখকগণ তাঁহাকে যেভাবে চিত্রিত করিতে চেষ্ট পাইয়াছেন, তাহ যে সম্পূর্ণরূপে হিংসা ও বিদ্বেষপ্রসূত, ইহা আমরা মুক্তকণ্ঠে না বলিয়া থাকিতে পারি না।

 যাঁহারা ইংরেজ লেখকদিগের অথবা তাঁহাদের অনুকরণকারিগণের রচিত নন্দকুমারচরিত্র পড়িয়া তাঁহাকে ঘৃণা করিয়া থাকেন, আমরা তাঁহাদিগকে সেই পুরুষপ্রধানের জীবনের সমস্ত ঘটনা আনুপূর্বিক অনুশীলন করিতে বলি। দেখিবেন, তৎসমূহের মধ্য হইতে তাঁহার চরিত্রের উজ্জ্বলাংশ নিষ্কাশিত হইয়া আসিবে এবং সেই হিংসাপরায়ণ লেখকদিগের বর্ণনা অশ্রদ্ধেয় বলিয়া প্রতীত হইবে। মহামতি বার্ক মহারাজের পরমশত্রু হেস্টিংসের কথা হইতেই নন্দকুমারচরিত্রের মহত্ত্ব প্রদর্শনের চেষ্টা পাইয়াছেন। নন্দকুমারের চরিত্র সম্বন্ধে মতভেদ থাকিলেও, তাঁহার প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তা কেহই অস্বীকার করেন নাই; তাঁহার শত্রুপক্ষীয়দিগকেও ইহা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতে হইয়াছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর বাঙ্গলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন দেশীয় ব্যক্তি তাঁহার সমকক্ষ ছিল না। তাঁহার রাজনৈতিক প্রতিভার জন্য ইংরেজ প্রভুগণ এতদূর ব্যাকুল হইয়াছিলেন যে, তাঁহারা সর্বদা তাঁহাকে দমন করিবার জন্য অশেষবিধ উপায় অবলম্বন করিতে বাধ্য হন। তাঁহার দেশীয় শত্রুগণ তাঁহার নিকট অগ্রসর হইতে সাহসী হইত না। নন্দকুমারের ক্ষমতা এতদূর প্রবল ছিল যে, অনেক মহারথীকে তাঁহার আশ্রয় লইতে হইয়াছিল। ক্লাইব, এমন কি ওয়ারেন হেস্টিংসও তাঁহার সাহায্য গ্রহণ করিয়াছিলেন। সিরাজউদ্দৌলা, মীরজাফর, মণিবেগম সকলেই তাঁহার পরামর্শে চলিয়াছিলেন। বিশেষতঃ মীরজাফরবংশীয়েরা তাঁহাকে আপনাদিগের হিতকারী বন্ধু বলিয়া সর্বদা বিবেচনা করিতেন। দেশের সমুদায় রাজা, মহারাজা জমিদার, ভূস্বামী ও সাধারণ প্রজাগণ তাঁহার অত্যন্ত বাধ্য ছিল।
 ৩ একমাত্র মহারাজ নবকৃষ্ণের নবজীবনীলেখক এন. এন. ঘোষসাহেব মহোদয় ইহাও স্বীকার করিতে চাহেন না।