পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২০৫


পদ্মনাভের রাজস্ব-সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা থাকায়, তিনি সরকারের কার্যে নিযুক্ত হন। ক্রমে ক্রমে তিনি আমীনের কার্যে নিযুক্ত হইয়া ফতেসিংহ, ঘোড়াঘাট


শক্তি ছিল, তাহা আমরা এই প্রথম শুনিলাম। নবকৃষ্ণ যে ৬০ টাকা বেতনের মুন্সী ছিলেন, ঘোষসাহেব তাহা অস্বীকার করিলেও আমরা হীরাঝিল প্রবন্ধে তাহা প্রতিপন্ন করিয়াছি। আমরা কি এক্ষণে ঘোঘমহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিতে পারি যে, ইহা ইতিহাস না উপন্যাস? ইহা যদি উপন্যাস না হইয়া ইতিহাস হয়, তবে আধুনিক বাঙ্গালী লেখকগণের যে মহাপরাধ হইয়াছে, তাহা বোধ হয় কোন নিরপেক্ষ ব্যক্তি স্বীকার করিবেন না। নবকৃষ্ণসম্বন্ধে ঘোষমহাশয়ের অন্যান্য উক্তি তুলিয়া তাহার সমালোচনায় আমরা অপ্রীতিকর বিষয়ের অবতারণা করিতে ইচ্ছা করি না। কিন্তু ঘোষমহাশয়কে আমরা পুনর্বার বলিতেছি যে, যিনি স্বীয় গ্রন্থের প্রতিপত্র অতিরঞ্জনের তুলিকা দ্বারা অঙ্কিত করিয়া স্বীয় নায়ককে মহাপুরুষ করিয়া তুলিয়াছেন, অন্য লেখকদিগের ঐতিহাসিক ঘটনা পরিত্যাগ করার জন্য ও নব ঐতিহাসিক ঘটনা সৃষ্টি করার জন্য দোষারোপ করা তাহার পক্ষে অতিসাহসের কার্য বলিয়াই অনুমিত হয়। তাহার পর নন্দকুমার সম্বন্ধে তিনি যেরূপ অনুদার মন্তব্য প্রকাশ করিয়া, তাহাকে যে সমস্ত বিশেষণে বিভূষিত করিয়াছেন, এবং তন্মধ্যে দুরাত্মা বা villain কথাটি প্রয়োগ করিয়া যেরূপ চুড়ান্ত অনৌদার্য দেখাইয়াছেন, তৎসম্বন্ধে আমরা অধিক কি বলিব, তাহা সাধারণের কিরূপ রুচিকর হয় তাহা তাহারাই বুঝিবেন। নন্দকুমারের শত্রুপক্ষীয় দুই এক জন ইংরেজ ব্যতীত কোন নিরপেক্ষ লেখক এমন কি মেকলের ন্যায় লেখকও নন্দকুমারকে দুরাত্মা বা villain বলিয়া অভিহিত করেন নাই। প্রায় সার্ধশত বৎসর পূর্বে মৃত একজন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের প্রতি এরূপ অনুদার মন্তব্য ঘোষসাহেবের ন্যায় বিচক্ষণ লেখকের লেখনী হইতে কিরূপে বহির্গত হইল, তাহা ভাবিতেও কষ্ট ও বিস্ময় উপস্থিত হয়। পাইওনিয়ারপ্রমুখ ইংরেজ সম্পাদকদিগেরও তাহা রুচিকর হয় নাই। নবকৃষ্ণ, যুধিষ্ঠির, ভীয়, শিবাজী বা প্রতাপসিংহ হউন, ক্ষতি নাই; কিন্তু তাহার প্রতিদ্বন্দ্বীকে যে দুরাত্মা বলিয়া অভিহিত করিতে হইবে, ইহা কি নিরপেক্ষ, উদার জীবনীলেখকের কর্তব্য? ঘোষসাহেব নন্দকুমারের ক্ষমতাও মধ্যবিধ বা সাধারণ রকমের ছিল বলিতেও বুটি করেন নাই; একথা কিন্তু তাহার কোন শবুও বলে নাই। তাহার ক্ষমতা অসীম ছিল বলিয়াই তাহার ঐরূপ দুর্দশা ঘটিয়াছিল। সুতরাং ইহাও ঘোষসাহেবের ঐতিহাসিক সত্য নহে। তাহার পর তিনি নন্দকুমার ও মীরজাফরের সম্বন্ধের বিষয় উল্লেখ করিয়া মীরজাফরের যে প্রাধান্য দিয়াছেন, তাহাও ঐতিহাসিক সত্য নহে। পূর্বোল্লিখিত হেস্টিংসের মন্তব্য হইতে তাহা সাধারণে বিশেষরূপে উপলব্ধি করিয়াছেন। ইহার পর ম্যালেসন ও মেকলে হইতে দুইচারি পঙতি উদ্ধৃত করিয়া ঘোষসাহেব বলিতেছেন যে, এইরূপ মতসামঞ্জস্যের পর কি বাঙ্গালীরা নন্দকুমারকে আপনার জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলিবে? দুইজন ইংরেজের মতসামঞ্জস্যে যদি নন্দকুমার দূরীভূত হন, হউন, ক্ষতি নাই; কিন্তু ঘোষসাহেবের মহাপুরুষ কয়জনের মতসামঞ্জস্যে দণ্ডায়মান হইবেন, তাহাও আমরা একবার জিজ্ঞাসা করিয়া রাখি। ঘোষসাহেব মেকলের মন্তব্যসম্বন্ধে যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা তাঁহার পর্যাপ্ত মন্তব্য নহে বলিয়া আমাদের ধারণা। কারণ মেকলে ইংরেজের সহিত ইটালীয়ের যে সম্বন্ধ, অন্য বাঙ্গালীর সহিত নন্দকুমারের সেইরুপ সম্বন্ধ বলিলেও তখন সমস্ত বাঙ্গালী জাতির চিত্র অতি করিয়া নন্দকুমারে সেই চিত্র শরীরী হইয়াছিল বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন, তখন থোষসাহেব নলকুমারকে কালিমামতি করিয়া অন্য বাঙ্গালীকে বিশেষতঃ তাহার নায়ককে উল করিয়া তুলিলে