পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২০৯


খার সহিত আলিবর্দীর বিবাদের সূচনা হয়। সরকারের নিকট মস্তাফা খার সৈন্যদিগের বেতন প্রাপ্য হওয়ায়, নবাব কতকগুলি জমিদারের নিকট হইতে তাহা আদায় করিয়া লওয়ার জন্য মস্তাফা খাঁকে আদেশ দেন। সৈন্যদিগকে বেতন আদায়ের ভার দিলে কিরূপ ব্যাপার উপস্থিত হইতে পারে, তাহা সাধারণে অনায়াসে বুঝিতে পারেন। জমিদারের৷ আপনাদিগের আসন্ন বিপদ দেখিয়া নন্দকুমারের শরণাপন্ন হন এবং তাহাকে তাহাদের জামীন হইবার জন্য অনুরোধ করেন। নন্দকুমার তাহাদিগের উপকার করিতে প্রতিশ্রুত হইয়া মস্তাফা খাঁর নিকট তাহাদের জামীন হইলেন। মস্তাফা খাঁর উদ্দেশ্য অন্যরূপ ছিল। তিনি শীঘ্র শীঘ্র আপনার প্রাপ্য অর্থ আদায় করিয়া বাঙ্গলা হইতে বিহারে যাইবার ইচ্ছা করেন এবং আলিবর্দীর নিকট হইতে বিহার অধিকার করিয়া আপনি তথায় স্বাধীন শাসনকর্তা হইবার আশা করিয়াছিলেন। সেইজন্য তিনি উক্ত অর্থের জন্য অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করিতে থাকেন। কিন্তু নন্দকুমার সেই সমস্ত জমির রাজস্ব তাহাকে সত্বর দিতে পারেন নাই। কারণ, জমিদারেরা তাহাকে সে অর্থ অত্যল্প কালের মধ্যে প্রদান করিতে সমর্থ হন নাই। নন্দকুমারের নিকট সেই সমস্ত জমির অর্থ পাওনা হওয়ায় মস্তাফা খাঁ তাহার প্রতি যারপরনাই বিরক্ত হইয়া তাহাকে বন্দী করিয়া রায়রায়ান রায়ের নিকট পাঠাইতে উদ্যত হন। নন্দকুমার এই সংবাদ পাইয়া কলিকাতায় পলায়ন করেন। কেহই তাহার পলায়নের কথা অবগত ছিল না। তাহার পর আলিবর্দীর সহিত মস্তাফা খাঁর বিবাদ পরিপক্ক হইয়া উঠিলে, মস্তাফা খাঁ প্রাণ পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হন। এই সময়ে চায়েন রায়ও পরলোকগত হইয়াছিলেন। ঐ সমস্ত ঘটনার পর নন্দকুমার আবার মুর্শিদাবাদে আগমন করিয়া মুৎসুদ্দীগণের বিশেষ অনুরোধে সরকার হইতে পরগণা সাতসইকার রাজস্বসংগ্রহের ভার প্রাপ্ত হইলেন।

 তৎকালে তিনি হুগলীনিবাসী শেখ হাবাউল্লার নিকট হইতে দুই সহস্র টাকা কর্জ লন। সাতসইকায় কিছুদিন কার্য করার পর তিনি মুর্শিদাবাদে আসিয়া পুনরায় হিসাবাদি বুঝাইয়া দেন। তাহার পর তিনি হুগলীতে জীবিকানির্বাহের জন্য গমন করেন। সেই সময়ে হাবাউল্লা তাহার প্রাপ্য অর্থের জন্য তাহাকে ৫ দিন আটক করিয়া রাখে। তাহার পর তিনি শেখ রস্তম নামক জনৈক ব্যক্তির জামীনে মুক্তি লাভ শেখ রস্তম কমলউদ্দীনের পিতা। এই কমলউদ্দীনই নন্দকুমারের বিরুদ্ধে অবশেষে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে। তৎকালে তিনি এতদূর অর্থকষ্টে পতিত হইয়াছিলেন যে, হুগলী হইতে চন্দননগরে গমন করিয়া ২০০০ টাকা মূল্যের শাল ১২০০ টাকায় বিক্রয় করিয়া, তাহা হইতে ১০০০ টাকা দেনশোধের জন্য প্রদান করেন। অবশিষ্ট ২০০ টাকা লইয়া পুনর্বার মুর্শিদাবাদে আসিতে বাধ্য হন। এই সময়ে হুগলীর ফৌজদার মহম্মদ ইয়ারবেগ খাঁ পদচ্যুত হওয়ায়, হেদায়ৎ আলি খাঁ তৎপদে নিযুক্ত হন।

 নন্দকুমার মুর্শিদাবাদে আসিয়া প্রায়ই যুবরাজ সিরাজউদ্দৌলার সহিত সাক্ষাৎ

করিতে যাইতেন। তখন তাহার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হইয়া উঠে। যুবরাজের 

১৪