পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২১০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাওয়ার জন্য তাহাকে অশ্ব ও পরিচ্ছদাদি ঋণ করিয়া ক্রয় করিতে হইত। পরে তৎসমস্ত অর্ধমূল্যে বিক্রয় করিয়া, কিয়ৎপরিমাণে দোকানদারদিগের দেনা শোধ করিতে বাধ্য হইতেন। তৎকালে ভাগ্য নন্দকুমারের প্রতি এতদুর অপ্রসন্ন হইয়াছিলেন যে, তিনি যেখানে যাইতেন, সেইখানে তাহার বিপদ উপস্থিত হইত। একদিন সিরাজউদ্দৌলা তাহার প্রাসাদের কোন নির্জন স্থানে বসিয়া আছেন, নন্দকুমার তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়া কানে কানে কি কথা বলেন। তাহাতে সিরাজ নন্দকুমারের প্রতি এতই কুদ্ধ হন যে, তাহাকে এক বংশখণ্ডের দ্বার প্রহার করিতে আদেশ দেন। নন্দকুমারের শরীর সবল থাকায়, তিনি সে বিপদ হইতে রক্ষা পান। সিরাজকে তিনি কি বলিয়াছিলেন, তাহা কেহই জানিতে পারে যে সময়ে নন্দকুমার সিরাজের নিকট যান, সেই সময় সিরাজ বিলাসের তরঙ্গে ভাসমান হইতেছিলেন, তাহার মনোগত ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেহ কোন কথা বলিলে তাহার প্রাণে সহ্য হইত না। হয়ত, নন্দকুমার সিরাজের যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে ও তাহার ভাবী কল্যাণের কোন কথা কহিয়া থাকিবেন। নতুবা সিরাজ এরূপ বিরক্ত হইয়া তাহাকে প্রহার করিতে আদেশ দিবেন কেন? তাহার বিলাসবিভ্রমের উপযোগী কোন কথা বলিলে, নিশ্চয়ই তিনি কুদ্ধ হইতেন না; বরং আনন্দিত হইয়া তাহাতে পুরস্কৃত করিতেন। সুতরাং নন্দকুমার তাঁহার ভাবী মঙ্গলের কোন কথা বলিয়া থাকিবেন, এরূপ অনুমান করা নিতান্ত অসঙ্গত নহে। অথবা নির্জনাবাসে উপস্থিত হওয়ায়, তাহার বিলাসের বিগ্নেৎপাদনের আশঙ্কায় সিরাজ তাহার প্রতি ঐরূপ ব্যবহার করিতেও পারেন।

 সিরাজের মঙ্গল করিতে গিয়া নন্দকুমার তাহার ক্রোধের পাত্র হইলেও, সিরাজ চিরদিনের জন্য তাহার উপর অসন্তুষ্ট হন নাই। উক্ত ঘটনার কিছুদিন পরে নন্দকুমার আবার সিরাজের আদেশে, কার্যলাভের জন্য হুগলীর ফৌজদার হেদায়ৎ আলি খার নিকট প্রেরিত হন। হেদায়ৎ আলি খা ঁশুনিয়াছিলেন যে, নন্দকুমার হুগলীর দেওয়ানীর জন্য আবেদন করিয়াছেন; নন্দকুমারকে তাহার উক্ত পদ দিবার ইচ্ছা না থাকায়, তিনি নানারূপ ছলে ও কৌশলে তাহার প্রতি অত্যাচার আরম্ভ করিলেন এবং তাহাকে অবমানিত করিতে লাগিলেন। এই সময়ে নন্দকুমার হেদায়ৎ আলির হস্ত হইতে নিষ্কৃতি পাইবার জন্য, স্বীয় ভ্রাতা রাধাকৃষ্ণকে এক পত্র লিখিয়াছিলেন। তাহাতে এইরূপ লিখিত হয় যে, সূর্যকুমার মজুমদারের নিকট হইতে হেদায়ৎ আলির নামে এরূপ ভাবে একখানি পত্র লইতে হইবে, যেন সে আর নন্দকুমারকে কষ্ট প্রদান করে। নন্দকুমার ব্যতিব্যস্ত হইয়া এই পত্র লিখিয়াছিলেন। সেই পত্র অদ্যাপি তাহার দৌহিত্রবংশীয় কুঞ্জঘাটার কুমারের নিকট বিদ্যমান আছে। উক্ত পত্রে স্থান বা তারিখের কোন উল্লেখ নাই। নন্দকুমার হেদায়ৎ আলির অত্যাচার ও অবমাননা


 ৬ পত্রখানির নকল পরিশিষ্টে প্রদত্ত হইল। সত্যচরণ শাস্ত্রী এই পত্রখানিকে হাবাংউল্লার