পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২১১


অসহ্য বোধ করিয়া পুনর্বার মুর্শিদাবাদে গমন করেন। মুর্শিদাবাদে আসিয়া তাহার দুরবস্থার একশেষ হয়। ইহার পর মহম্মদ ইয়ারবেগ খাঁ পুনর্বার ফৌজদারপদে নিযুক্ত হন।

 এই সময়ে নন্দকুমার ইয়ারবেগের বন্ধু সাদেকউল্লার নিকট প্রায়ই যাতায়াত করিতেন। সাদেকউল্লা নন্দকুমারের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি র্তাহার বুদ্ধিমত্তা, কার্যকলাপ প্রভৃতি বিশেষরূপে জানিতেন। নন্দকুমারের সহিত ঘনিষ্ঠত বৃদ্ধি হওয়ায়, সাদেকউল্লা পুনরায় ইয়ারবেগের সহিত র্তাহার পরিচয় করিয়া দেন। নন্দকুমার তৎকালে হুগলীর দেওয়ানী-পদের প্রার্থী ছিলেন; কিন্তু লহরীমাল নামে এক ব্যক্তির প্রতি ইয়ারবেগের অত্যন্ত বিশ্বাস থাকায়, তিনি লহরীমালকে দেওয়ানী প্রদান করেন; অগত্যা নন্দকুমারকে হুগলী পরিত্যাগ করিয়া মুর্শিদাবাদে আসিতে হয়। কিছুকাল পরে লহরীমাল অকৃতজ্ঞভাবে হুগলী-বন্দরের শুদ্ধ ফৌজদারের হস্ত হইতে পৃথক করিয়া লন। ইহাতে ইয়ারবেগ তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট হইয়া অপর কোন ব্যক্তিকে দেওয়ানী-পদ প্রদান করিতে ইচ্ছা করেন এবং সাদেকউল্লার অনুরোধে অবশেষে নন্দকুমারকে হুগলীর দেওয়ানী-পদ প্রদান করিয়াছিলেন। ইহার পর হইতে ক্লমে ক্লমে নন্দকুমারের ভাগ্যোদয় হইতে আরম্ভ হয় এবং তদবধি তিনি দেওয়ান নন্দকুমার নামে অভিহিত হইতে থাকেন। নন্দকুমার সর্বদা দক্ষতার সহিত কার্য করিয়া ইয়ারবেগকে অত্যন্ত সন্তুষ্ট রাখিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ইয়ারবেগের ভাগ্যে অধিক দিন হুগলী ফৌজদারী পদে প্রতিষ্ঠিত থাকা ঘটিয়া উঠে নাই; তিন বৎসর পরে তিনি কোন কারণে পদচ্যুত হইয়। স্বীয় দেওয়ান নন্দকুমারকে লইয়া সমস্ত নিকাশ বুঝাইয়া দিবার জন্য মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইয়াছিলেন। তাহার নিকাশদি বুঝাইতে এক বৎসর সময় লাগিয়াছিল। ইতিমধ্যে সর্বজনপ্রিয় নবাব আলিবদাঁ খাঁ মহবৎ জঙ্গের মৃত্যু হইল এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাঙ্গলা, বিহার ও উড়িষ্যার মসনদে উপবিষ্ট হইলেন।

 সিরাজ যৎকালে কলিকাতায় ইংরেজদিগকে দমন করিয়া তাহাদের দুরভিসন্ধি বিশেষ রূপে বুঝিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, তৎকালে হুগলীতে কোন ফৌজদার ছিল না। ইয়ারবেগ মুর্শিদাবাদে নিকাশ দিতে ব্যস্ত ছিলেন; এরূপ সময়ে পাছে ইংরেজের কোনরূপে আবার বাঙ্গলায় প্রবিষ্ট হন, সেইজন্য তিনি মাণিকচাদকে কলিকাতায় ও মির্জা মহম্মদ আলিকে হুগলীর ফৌজদার পদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। উক্ত মির্জ মহম্মদ আলির দ্বারা হুগলীর ন্যায় প্রসিদ্ধ বন্দরের শাসনকার্য সুচারুরূপে


সহিত নন্দকুমারের গোলযোগের পত্র বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু তাহ প্রকৃত নহে। পত্রে হিদাতুল্লা আছে, হাবাৎউল্লা নাই।

 ৭ এই লহরীমাল মুর্শিদকুলীর বিশ্বস্ত কর্মচারী লহরীমাল কি না বলা যায় না। সম্ভবতঃ তিনি মুর্শিদকুলীর সময়ের লহরীমালই হইবেন।