পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২২২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

হইলে, মীরজাফর ও নন্দকুমার কলিকাতায় আসিলেন। কাউন্সিলের সভেরা পূর্ব হইতেই নন্দকুমারের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন, এক্ষণে আরও অসন্তুষ্ট হইয়া উঠিলেন। তাহার পর, নন্দকুমার নবাবের সহিত মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন। মীরজাফরের দ্বিতীয় বার সিংহাসনে আরোহণের সময় নন্দকুমার খালসার দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হন। এক্ষণে তিনি বঙ্গদেশের সর্বময় কর্তা হইয়া উঠিলেন। রাজা, জমিদার সকলে র্তাহার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইতে লাগিলেন। নবাব কাসেম আলি খাঁ হিন্দু জমিদারদিগকে অত্যন্ত উৎপীড়িত করিয়াছিলেন, কাহাকে কাহাকেও মুঙ্গের দুর্গে কারারুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন। ইংরেজদিগের সহিত র্তাহার ঘোরতর বিবাদ উপস্থিত হওয়ায়, রাজ্যমধ্যে রাজস্ব আদায়েরও বিলক্ষণ গোলযোগ উপস্থিত হয়। অনেকের রাজস্ব বাকী পড়িয়া যায়। পাছে, আবার জমিদারদিগের প্রতি অত্যন্ত অত্যাচার হয়, সেইজন্য র্তাহারা নন্দকুমারের শরণাগত হইলেন। নন্দকুমার দেখিলেন যে, জমিদারদিগের নিকট যত পাওনা রহিয়াছে, তাহারা কখনও একেবারে তাহা পরিশোধ করিতে পরিবেন না। সেইজনা তিনি কতক ছাড়িয়া দিয়া কতক বা কিস্তি কিস্তি দেওয়ার বন্দোবস্ত করিয়া তাহাদিগকে নিস্কৃতি দিলেন। মীর কাসেমের সময় কোম্পানীর গৃহীত প্রদেশ ব্যতীত সমস্ত বঙ্গদেশে ২,৪১,১৮,৯১২ টাকা রাজস্ব বন্দোবস্ত হইয়াছিল। কিন্তু ১৭৬২-৩ খ্রীঃ অব্দে ৬৪,৫৬,১৯৮ টাকা মাত্র রাজস্ব আদায় দেখিতে পাওয়া যায়। ইহার কারণ এই যে, মীর কাসেম অধিক পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি করিয়াছিলেন ও ইংরেজদেগের সহিত র্তাহার বিবাদ সংঘটিত হওয়ায় রাজ্যমধ্যে যে বিপ্লব উপস্থিত হইয়াছিল, তজ্জন্য রাজস্ব আদায়ের পক্ষে নানারূপ বিঘ্ন ঘটিয়াছিল। নন্দকুমার সেই অতিরিক্ত করভারের লাঘব করিয়া ১৭৬৩-৪ খ্রীঃ অব্দে ১,৭৭,০৪,৭৬৬ টাকা ও ১৭৬৪-৫ খ্রীঃ অব্দে ১,৭৬,৯৭,৬৭৮ টাকা রাজস্ব বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু সে সময় পর্যন্তও বিপ্লবপীড়িত জমিদার ও প্রজাগণের অবস্থা ভাল না হওয়ায়, উক্ত দুই বৎসরে অনেক টাকা রাজস্ব বাকী থাকিরা যায়। আমরা দেখিতে পাই যে, প্রথম বৎসরে ৭৬,১৮,৪o৭ ও দ্বিতীয় বৎসরে ৮১,৭৫,৫৩৩ টাকা মাত্র রাজস্ব আদায় হইয়াছিল।

 নন্দকুমারের রাজস্ববন্দোবস্ত মীর কাসেমের অপেক্ষা অল্প হওয়ায়, শত্ৰুগণ র্তাহাকে এই বলিয়া দোষ দিয়া থাকেন যে, তিনি জমিদারদিগকে অব্যাহতি দিয়া নিজে অনেক টাকা লাভ করিয়াছিলেন। ১৮ অবশ্য তৎকালে রাজস্ববন্দোবস্তকার্যে বন্দোবস্তকারীর কিছু কিছু প্রাপ্য হইত বটে, কিন্তু নন্দকুমার প্রভুর ক্ষতি করিয়া জমিদারদিগের সহিত এরূপ বন্দোবস্ত কখনও করেন নাই। কারণ র্তাহার প্রভু মীরজাফর খাঁ তাহার সে বন্দোবস্তে অসন্তুষ্ট হন নাই। তিনি নন্দকুমারকে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত বিশ্বাস এবং র্তাহারই পরামর্শানুসারে কার্য করিয়াছিলেন। মীরজাফরের অর্থের প্রয়োজন নিতান্ত

 ১৮ Barwell's latter.