পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২৩৩

নহে। রেজা খাঁকে নিষ্কৃতি পাইতে দেখিয়া, জনসাধারণে আশ্চর্যান্বিত হইল। নন্দকুমারও হেস্টিংসচরিত্র বিশেষরূপে উপলব্ধি করিলেন।

 ইহার পর হইতে দেশমধ্যে হেস্টিংসসাহেবের অত্যাচার বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। উৎকোচপ্রদানে জমিদার ও প্রজাসাধারণে অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিল। গঙ্গাগোবিন্দসিংহ, কান্তবাবু, দেবীসিংহ প্রভৃতি দেশীয় প্রাতঃস্মরণীয় (?) ব্যক্তিগণ হেস্টিংসের অনুচর হইয়া উঠিলেন। নবকৃষ্ণ, রেজা খা ঁপ্রভৃতিও তাহাতে যোগ দিলেন। নন্দকুমার দেশের অবস্থা দেখিয়া অত্যন্ত মর্মাহত ও দুঃখিত হইলেন। কিন্তু এক্ষণে তিনি একরূপ ক্ষমতাহীন; কি করিবেন, কিছুই স্থির করিতে পারলেন না। কি জমিদার কি প্রজা, সকলে আসিয়া তাঁহার নিকট আপনাদিগের প্রতি অত্যাচার এবং স্ব স্ব মনোবেদনার কথা জানাইতে আরম্ভ করিলেন। শুনিয়া সেই পরদুঃখ কাতর স্বদেশভক্তের প্রাণে আঘাত লাগিল। তিনি যথাসাধ্য তাঁহাদিগকে সান্ত্বনা দিয়া স্বীয় ক্ষমতাহীনতার কথা জানাইতে লাগিলেন; কিন্তু কেহই তাঁহার আশ্রয় পরিত্যাগ করিতে চাহিল না। নাটোর, বর্ধমান প্রভৃতি বাঙ্গলার শীর্ষস্থানীয় জমিদারবৃন্দ হেস্টিংস ও তাঁহার অনুচরবর্গের ভীষণ অত্যাচারে ব্যতিব্যস্ত হইয় তাঁহার শরণাগত হইলেন। তিনি তাঁহাদিগের কি উপায় করিবেন, ভাবিয়া স্থির করিতে পারিলেন না। নন্দকুমারের নিকট সাধারণের গমনাগমন এবং তাঁহার নিকট অত্যাচার-কাহিনীর প্রচারে, হেস্টিংস ও তাঁহার অনুচরবর্গ ক্রমে নন্দকুমারের প্রতি অসন্তুষ্ট হইতে লাগিলেন। এইরূপে উভয় পক্ষের মধ্যে ঘোরতর বিরক্তির সঞ্চার হইল। হেস্টিংস নন্দকুমারের প্রতি যেটুক সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, তাহা একেবারে ভুলিয়া গিয়া পুনর্বার নিজ মূর্তি ধারণ করলেন। নন্দকুমারও তাঁহার অত্যাচারের প্রতিবিধানের জন্য চিন্তা করিতে লাগিলেন। সহসা তাঁহার একটি সুযোগ উপস্থিত হইল। আমরা যথাক্রমে তাহার নির্দেশ করিতেছি।

 পলাশী-যুদ্ধের পর হইতে যখন বঙ্গরাজ্যে ইংরেজদিগের ক্ষমতা বদ্ধমূল হইতে আরম্ভ হয়, তদবধি দেশমধ্যে কোম্পানীর কর্মচারিগণের অযথা প্রভুত্ব ও অত্যাচার দিন দিন বর্ধিত হইতে থাকে। এই সমস্ত অত্যাচারের কথা ইংলণ্ডে পৌছিলে, মহানুভব ব্রিটিশজাতির হৃদয়ে অত্যন্ত আঘাত লাগে। তাঁহারা নিরীহ ভারতবাসিগণের প্রতি অত্যাচার নিবারণের জন্য কৃতসঙ্কল্প হন। পার্লিয়ামেন্ট সভা সেই সমস্ত বিষয়ের অনুসন্ধানের জন্য ১৭৭২ খ্রীঃ অব্দে গুপ্তসমিতি নামে এক সভার প্রতিষ্ঠা করিলেন। তাঁহাদের অনুসন্ধানে সমস্ত বিষয় প্রকাশিত হইলে, এই অত্যাচার নিবারণের জন্য, ইংলণ্ডের তৎকালীন মন্ত্রী লর্ড নর্থের মন্ত্রিত্বকালে রাজ্য-সংক্রান্ত নিয়ামক বিধি (Regulating Act) বিধিবদ্ধ হইয়া, বাঙ্গলার গবর্নরকে ভারতবর্ষের গবর্নর জেনারেল করা হয় ও তাঁহার সাহায্যের জন্য চারি জন সদস্য নিযুক্ত হয়। তাঁহাদের অত্যাচার নিবারণ ও দেশের সুবিচারের জন্য সুপ্রীমকোর্ট স্থাপিত হইয়া তাহাতে এক জন প্রধান বিচারপতি (Chief Justice) ও অপর তিন জন বিচারক নিযুক্ত হন। গবর্নর