পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২৪১


 পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, বুলাকাঁদাসের অঙ্গীকার-পত্রে মাতাব রায় ও মহম্মদ কমল মোহর করে ও শীলাবৎ নাম স্বাক্ষর করিয়া দেয়। কমলউদ্দীনের সাক্ষ্য হইতে প্রমাণ করিতে চেষ্টা করা হইয়াছিল যে, মহম্মদ কমলের মোহরই তাহার নিজের মোহর। এই কমলউদ্দীনই আমাদিগের পূর্বোল্লিখিত সেই শয়তান-প্রকৃতি হিজলীর ইজারদার।

 কমলউদ্দীন বলিতে আরম্ভ করে যে, ১৭৬৩ খ্রীঃ অব্দে যখন নন্দকুমার নবাব মীরজাফরের সহিত মুঙ্গেরে অবস্থান করিতেছিলেন, সেই সময় সে মুঙ্গেরে মহারাজের নিকট তাহার মোহর পাঠাইয়া দেয়। মোহর পাঠাইবার এইরূপ কারণ উপস্থিত হয়। এক সময়ে কমলউদ্দীন কোন কারণে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিল; পরে কারাগার হইতে মুক্তি লাভ করিলে, সে নবাব মীরজাফরের নিকট এক আজি দাখিল করিবার ইচ্ছা করে। নন্দকুমারকে সে কথা জানাইলে, তিনি আজি লিখাইয়া কমলের মোহরসংযুক্ত করিবার জন্য তাহ চাহিয়া পাঠান। এইজন্য সে নবাবকে ১ স্বর্ণ মোহর ও ৪ টাকা নজর এবং নন্দকুমারকে সেইরূপ এক স্বর্ণ মোহর ও ৪ টাকা নজর পাঠাইয়া সেই সঙ্গে তাহার নামের মোহরও পাঠাইয়া দেয়। অঙ্গীকার-পত্রের মোহরে আবদুল মহম্মদ কমল লেখা থাকায় এবং তাহার নাম কমলউদ্দীন হওয়ায়, উভয়ের পার্থক্যের কথা জিজ্ঞাসা করিলে, কমল উত্তর দেয় যে, পূর্বে তাহার নাম মহম্মদ কমল ছিল; পরে নবাব নজমউদ্দৌলার সময় সে কমলউদ্দীন আলি খাঁ এই উপাধি পাইয়াছে এবং তদবধি সে সেই নামের একটি মোহর ব্যবহার করিয়া থাকে। কমল বলে যে, তাহার পূর্বের মোহর মহারাজের নিকট থাকায়, সে র্তাহার নিকট তাহ চাহিয়াছিল, কিন্তু তিনি ফেরত দেন নাই। তাহার পর মোহনপ্রসাদের নিকট সে শুনিয়াছে যে, মহারাজ তাহার মোহর জাল দলিলে ব্যবহার করিয়াছেন। মহারাজকে সে কথা জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি বলেন যে, কমলের উপর বিশ্বাস করিয়াই তিনি এই কার্য করিয়াছেন। কমলকে তাহার পক্ষ হইয়া তিনি সাক্ষ্য দিতেও বলেন। কমল তাহাতে উত্তর দেয় যে, লোকে প্রভুর জন্য জীবন দিতে পারে, কিন্তু ধর্ম নষ্ট করিতে পারে না। কমল এই সকল কথা খাজা পিতুস ও মুন্সী সদরউদ্দীনের নিকট গম্প করিয়াছিল। কমলউদ্দীনের পর খাজা পিতুস ও সদরউদ্দীনকে আহবান করিয়া তাহ প্রমাণ করা হয়। শীলাবতের স্বাক্ষর প্রমাণ করিবার জন্য সহবৎ পাঠক ও রাজা নবকৃষ্ণকে উপস্থিত করা হয়।

 সহবৎ পাঠক বলে যে, সে অনেক দিন শীলাবতের সহিত কার্য করিয়াছিল এবং তাহার অনেক হস্তাক্ষর দেখিয়াছে; অঙ্গীকার-পত্রে শীলাবতের হস্তাক্ষর বলিয়া তাহার বিবেচনা হইতেছে না।

 তাহার পর নবকৃষ্ণ সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত হইলেন। র্তাহাকে শীলাবতের হস্তাক্ষর জানার কথা জিজ্ঞাসা করা হইলে, তিনি বলেন যে, আমি তাহার হস্তাক্ষর শেষরূপে জানি। অঙ্গীকার-পত্র দেখান হইলে, নবকৃষ্ণ বলিলেন যে, “বুলাকা

  ১৬