পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৪৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


কৃষ্ণজীবন আসামী পক্ষ হইতেও মানিত হওয়ায়, আমরা আসামীপক্ষীয় সাক্ষীদিগের সাক্ষ্যোল্লেখের সময় তাহার কথা বলিতে চেষ্টা করিব।

 ফরিয়াদী পক্ষের সাক্ষ্য গৃহীত হইলে, আসামীপক্ষের সাক্ষৗদিগকে আহবান করিবার পূর্বে মহারাজের কেন্সিলি ফ্যারারসাহেব প্রথমতঃ প্রামাণ্য বিষয় নির্দেশ করিলেন। তিনি এইরূপ প্রকাশ করিয়া বলেন যে, অঙ্গীকার-পত্রের সাক্ষদ্বয় মাতাবরায় ও মহম্মদ কমল জীবিত থাকিতে থাকিতেই মোহনপ্রসাদ ইহার বিষয় অবগত হন। বুলাকীদাস নন্দকুমারকে অঙ্গীকার-পত্রের জন্য যে পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহাও উপস্থাপিত করা হইবে। গঙ্গাবিষ্ণুর সাক্ষাতে মোহনপ্রসাদ ও পদ্মমোহন যে হিসাবে নাম স্বাক্ষর করিয়াছিল, সেই হিসাবপত্রেও যে অঙ্গীকার-পত্র ও জহরতাদির কথা আছে, তাহাও উপস্থাপিত করিতে চান; বুলাকীদাসের যে খাতায় জহরতের হিসাব ছিল, তাহ নষ্ট হইয়। গিয়াছে; সুতরাং তাহা উপস্থাপিত করিবার উপায় নাই। এতদ্ভিন্ন, তিনি জহরত ও অঙ্গীকার-পর সম্বন্ধে নন্দকুমার ও বুলাকাঁদাসের মধ্যে আরও অনেক পরাদি উপস্থাপিত করিতে চান। বুলাকাঁদাসের হস্তলিখিত পত্রাদি উপস্থাপিত করা হইয়াছিল, কিন্তু তাহাতে র্তাহার নাম বা মোহরযুক্ত নী থাকায় আদালত তাহ সাক্ষ্য বলিয়া গ্রহণ করেন নাই। যে সমস্ত প্রধান প্রধান দলিল উপস্থাপিত করা হয়, সে সম্বন্ধে আমরা পরে বলিব। আপাততঃ আসামী পক্ষের কয়েক জন প্রধান সাক্ষীর সক্ষ্যের বিষয় উল্লেখ করা যাইতেছে।

 প্রথমতঃ আসামী পক্ষ হইতে তেজরায় নামে একজন সাক্ষীকে আহবান করা হয়। তেজরায় জাতিতে ক্ষত্রিয় ও চু"চড়া তাহার জন্মস্থান ছিল। তেজরায় সাক্ষ্য দেয় যে, মাতাবরায় নামে তাহার এক জ্যেষ্ঠভ্রাতা ছিল, এক্ষণে সে মৃত। তাহার

- - - - - - - - - - - - - - -

বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রদানের জন্যই উপস্থিত হইয়াছিলেন, এবং পাছে স্পষ্টতঃ সাক্ষ্য প্রদান করিলে নন্দকুমারের প্রতিদ্বনী বলিয়া তাহার সাক্ষ্যে অবিশ্বাস হয়, এবং শপথ গ্রহণ করিয়া ধর্মতঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় অত্যন্ত নীচান্তঃকরণের পরিচয় দেওয়া হয়, সেইজন্য তিনি “অশ্বথামা হত ইতি গজঃ” প্রকারের সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছিলেন। তিনি যাহা বলিতে উপস্থিত হইয়াছিলেন, কৌশলকমে তাহাই যে প্রতিপন্ন করিয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। নবকৃষ্ণ যেরূপ ভাবেই সাক্ষ্য প্রদান করুন না কেন, তাহার সাক্ষ্য জেরায় শিথিল করা কঠিন বলিয়া আসামীপক্ষীয় কেন্সিলের বিশেষরূপেই জানিতেন, এবং তজ্জন্যই তাহার জেরা করিতে চেষ্টা করেন নাই। জেরা সাক্ষিবিশেষে যে সময়ে সময়ে জেরাকারীর বিরুদ্ধ হইয়া পড়ে, ইহা অবশ্যই ঘোষমহাশয় অবগত আছেন, এবং ফ্যারার প্রভৃতি যে তাহ অবগত ছিলেন, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। সুতরাং ঘোষমহাশয় নবকৃষ্ণের সাক্ষ্য জেরায় অটুট থাকাসম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন, তাহা আমরাও অস্বীকার করি না। যদি কোন ব্যক্তির সাক্ষ্য কঠোর জেরাতেও অটুট থাকিতে পারে, তাহ যে নবকৃষ্ণের ন্যায় ব্যক্তির সাক্ষ্য, ইহা কেহই অস্বীকার কারবেন না। ফলতঃ নবকৃষ্ণের সাক্ষ্যের সমর্থন জীবনীলেখকের বর্ণনা ব্যতীত নিরপেক্ষ ব্যক্তির যুক্তিযুক্ত কথা বলিয়া কেহই বিশ্বাস করবেন না, এরূপ অনুমান আমরা অনায়াসেই করিতে পারি।