পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৫০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

আত্মীয়-স্বজন বিদায় গ্রহণ করিলে, তিনি নিজ হিসাব পরিদর্শন ও মন্তব্যাদি লিখিয়াছিলেন।

 পরদিন প্রাতঃকালে জেলে উপস্থিত হইয়া দেখি, অনাথ-দরিদ্রগণের কাতর রোদনধ্বনিতে চতুদিক প্রতিধ্বনিত হইতেছে; তাহারা মহারাজকে শেষদর্শন করিতে আসিয়াছে। মহারাজ জেলরক্ষকের আবাসস্থানের একটি গৃহে আসিয়া উপবেশন করিলে, আমিও তাহার পার্শ্বে উপবেশন করিলাম। মহারাজ প্রসন্নচিত্তে তিনজন ব্রাহ্মণকে তাহার মৃতদেহ-বহনের জন্য ইঙ্গিত করিলে, তাহারা দুঃখে অভিভূত হইয়া পড়িল। আমি আমার ঘড়ি দেখিয়া মহারাজকে বলিলাম যে, এখনও সময় হয় নাই। তিনি আবার আমাকে গুরুদাসের, ক্লেভারিং, মন্সন ও ফ্রান্সিসের কথা বলিয়া, একমনে ঈশ্বরধ্যানে নিমগ্ন হইলেন। অবশেষে তিনি উঠিয়া আমাকে ইঙ্গিত করিয়া, তাহার পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি রাজা গুরুদাসকেই লইয়া যাইবার জন্য জেলখানার ভূতাদিগকে আদেশ দিয়া, পান্ধীতে আরোহণপূর্বক বধ্যভূমি অভিমুখে যাত্রা করিলেন। আমরা গিয়া দেখিলাম, সেই প্রশস্ত ময়দান ** লোকে পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে। মহারাজ উহার সমভিব্যাহারী ব্রাহ্মণ তিনটির জন্য আমাকে অপেক্ষা করিতে বলিলেন। তাহার। উপস্থিত হইলে, তাহদের সহিত কোন গুপ্ত কথা থাকিতে পারে মনে করিয়া, আমি লোকজন সরাইয়া দিতে চাহিলাম। মহারাজ আমাকে নিষেধ করিয়া তাহাদিগকে গুরুদাস ও তাঁহার পরিবারবর্গের কথা মনে করিয়া দিলেন। মহারাজ বারংবার আমাকে সেই তিন জন ব্রাহ্মণের দ্বারা মৃতদেহ বহন করিবার জন্য অনুরোধ করেন এবং আর কাহাকেও স্পর্শ করিতে নিষেধ করিয়া যান। তিনি জনতার জন্য কিছুমাত্র বিচলিত হন নাই। তাঁহার বন্ধুবান্ধবদিগের সহিত সাক্ষাতের কথা বলিলে, তিনি বলেন যে, আমার অনেক বন্ধু আছেন, এ স্থানে সকলের সহিত সাক্ষাতের প্রয়োজন নাই। পরে তিনি একজনের নাম করিয়াছিলেন; অবশেষে তাহাকেও উপস্থিত হইতে নিষেধ করেন। আমাকে পুনর্বার প্রশান্তচিত্তে ক্লেভারিং, মন্সন ও ফ্রান্সিসের কথা স্মরণ করিতে বলেন। তাহার পর তিনি পান্ধীতে ঠেস দিয়া জপ করিতে থাকেন। আমি তাহাকে বলিলাম যে, গোলমালে আমি তাহার কথা বুঝিতে পারিব না; অতএব সময় হইলে, তিনি যেন কোনরূপ ইঙ্গিত করেন। তিনি বলিলেন যে, আমি হস্তদ্বারাই সঙ্কেত করিব। পরে তাহার হস্ত বদ্ধ থাকার কথা বলিলে, তিনি পা নাড়িয়া সঙ্কেত করিতে স্বীকৃত হন।

 সময় উপস্থিত হইলে, আমি বধমঞ্চের নিকট তাঁহার পান্ধী লইয়া যাইতে বলিলাম;

 ৩৭ যে স্থান মহারাজের বধ্যভূমি বলিয়া নিদিষ্ট হইয়াছিল, তাহার সম্বন্ধে বিশেষ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু কেহ কেহ অনুমান করিয়া থাকেন যে, খিদিরপুরের নিকট কুলীবাজার ও হেস্টিংস সেতুর মধ্যবর্তী নদীর নিকটস্থ শূন্য ময়দানে নন্দকুমারের বধমঞ্চ নিমিত হইয়াছিল।