পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২৫৩

প্রতিহিংসার নিবৃতি করিলেন। আর কতকগুলি কুলাঙ্গার বঙ্গবাসী তাহাতে যোগ দিয়া, আপনাদের স্বার্থসিদ্ধির পথ পরিষ্কার করিল! হা ধর্ম! তুমি যে অনেক দিন বঙ্গভূমি হইতে বিদায় লইয়াছ, তাহ কেমন করিয়া জানিব!

 দেশের মঙ্গল করিতে গিয়া মহারাজ নন্দকুমার, কিরূপে জীবন বলি দিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, আমরা সংক্ষেপে তাহার মর্ম প্রদান করিলাম। হেস্টিংসের কূটচকে ইম্পের অন্যায্য ও পক্ষপাতপরিপূর্ণ বিচারে তাহাকে যে জীবন বিসর্জন দিতে হইয়াছিল, ইহাও সাধারণে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিয়াছেন। যদিও ইংলণ্ডীয় আইনে জালিয়াত আসামীর প্রাণদণ্ডের আদেশ তৎকালে প্রচলিত হইয়াছিল এবং কলিকাতার অধিবাসিগণ সেই আইনের দ্বারা দণ্ডাহ ঁহইতে পারিত, তথাপি কলিকাতার অধিবাসীরা সে বিষয়ে যে অনেক পরিমাণে অনভিজ্ঞ ছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। সুপ্রীমকোর্টের স্থাপনা অবধি কলিকাতায় ইংলণ্ডীয় আইনের প্রচলন বিশেষরূপে আরম্ভ হয়। তৎকালে ভারতবর্ষীয় আইনে জালিয়াতের প্রাণদণ্ডের ব্যবস্থা ছিল না। ইহার পূর্বে কলিকাতার দুই জন জালিয়াত অপরাধীর প্রাণদণ্ড রহিতও হইয়াছিল। জজের ইচ্ছা করিলে, নন্দকুমারের অপরাধ যথার্থ হইলেও তাঁহাকে প্রাণদণ্ড হইতে অব্যাহতি দিতেও পারিতেন। কলিকাতায় ইংলণ্ডীয় আইন প্রচলিত হইলেও কলিকাতার অবস্থা যে তাৎকালিক ইংলণ্ডের ন্যায় ছিল না, ইহাও তাহাদের বিবেচনা করা উচিত। ছিল এবং নন্দকুমারকে ব্রাক্ষণ বলিয়া তাহারা অব্যাহতি দিতে পারিতেন। কিন্তু হেস্টিংসের অনুরোধ অব্যর্থ॥ যিনি প্রভুভক্তি ও স্বদেশের হিতসাধনের জন্য

 ৪২ নন্দকুমারের বিচার আইনানুযায়ী হইয়াছিল কি না, এ বিষয় লইয়া অনেক তর্কবিতর্ক আছে। আমরা এস্থলে সে বিষয়ের আলোচনা করিতে চাহি না। তবে আমরা এইটুকুমার বলিতে পারি যে, যদিও কলিকাতায় পূর্ব হইতে ইংলণ্ডীয় আইন প্রচলিত হইয়াছিল এবং তদনুসারে নন্দকুমারের বিচার হইয়াছিল স্বীকার করা যায়, তথাপি জজের ইচ্ছা করিলে প্রাণদণ্ডাজ্ঞা ব্যতীত তাহার অন্যবিধ দণ্ডের বিষয় বিবেচনা করিতে পারিতেন, এবং এ বিষয়ে দেশের শাসনকর্তা কাউন্সিলের সভ্যগণের সহিত পরামর্শও করিতে পারিতেন। বিশেষতঃ যখন ভারতবর্ষে ইংরেজী আইনের বিচারদ্বারা তাহার একজন ব্রাহ্মণের প্রাণদণ্ডাজ্ঞার আদেশ দিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, তখন এ বিষয়ে তাহদের একবার ইংলণ্ডাধিপের মত জিজ্ঞাসা করাও অত্যন্ত উচিত ছিল। ইতিপূর্বে ভারতবর্ষে কখনও সাধারণ অপরাধের জন্য ব্রাহ্মণের প্রাণদণ্ড বিহিত হয় নাই। এ বিষয়ে মেকলে প্রভৃতি যাহা বলিয়াছেন, তাহাই প্রকৃত। কিন্তু ম্যালেসনসাহেব তাহ৷ স্বীকার করিতে চাহেন না। তিনি বলেন যে, আকবর বা তাঁহার পরবর্তী সম্রাটগণ ব্রাহ্মণ অপরাধীকে অন্যান্য জাতীয় অপরাধী হইতে পৃথকৃ করেন নাই। ম্যালেসনসাহেবের এই মন্তব্য প্রকৃত নহে। যদিও আমরা মুসলমান আইনে ইহার কোনরূপ বিশেষ ব্যবস্থা দেখিতে পাই না, তথাপি আমরা কার্যদ্বারা অনেক স্থলে তাহার প্রমাণ পাইয়। থাকি। ম্যালেসনসাহেব কি এমন কোন দৃষ্টান্ত দেখাইতে পারেন যে, কোন ব্রাহ্মণ মুসলমান ধর্মবিরুদ্ধ কোন অপরাধ ব্যতীত সাধারণ অপরাধের জন্য প্রাণদণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত হইয়াছেন? এরূপ একটিমাত্রও দৃষ্টান্ত তিনি দেখাইতে পারবেন না। মুসলমান রাজত্বে ব্রাহ্মণগণের কিরূপ