পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৬৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

গ্রহণ করিলে, তাঁহার প্রিয়তম দৌহিত্র সিরাজ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করেন। আলিবর্দী মৃত্যুকালে বলিয়া যান যে, ইংরেজের যেরূপ ক্ষমতাশালী হইতেছে, তাহাতে যেরূপে পার, ইহাদিগকে দমন করিতে চেষ্টা করিবে। সেই পরামর্শের বশবর্তী হইয়া, সিরাজ ইংরেজদিগের উচ্ছেদসাধনে কৃতসংকল্প হইলেন এবং অবিলম্বে কাশীমবাজার কুঠী আক্ৰমণ করিলেন। নবাবসৈন্যের নিকট ইংরেজবণিগ্‌গণ আত্মসমর্পণ করিল। এই সময়ে ওয়াট্সসাহেব কাশীমবাজারের অধ্যক্ষ ছিলেন। কলেট ও ব্যাট্‌সন সাহেবদ্বয় তাঁহার সদস্যরূপে অবস্থিতি করিতেন। ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁহদের নিম্নপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। ইংরেজেরা আত্মসমর্পণ করিলে, নবাবের কর্মচারিগণ তাঁহাদিগকে সুচতুর প্রহরীর দ্বারা বেষ্টিত করিয়া, মুর্শিদাবাদে প্রেরণ করিল। এই বন্দীদিগের মধ্যে কান্তবাবুর সুপরিচিত হেস্টিংসসাহেবও কষ্ট ভোগ করিতে বাধ্য যন। তথায় কিছুদিন অবস্থানের পর, তাঁহারা মুক্তি লাভ করেন। এই মুক্তিলাভের সহিত কান্তবাবুর এক বিশেষ সম্বন্ধ থাকায়, তাঁহার ভবিষ্যৎ ভাগ্যোদয়ের সূচনা হয়।

 এইরূপ শুনিতে পাওয়া যায় যে, ওয়ারেন হেস্টিংস মুর্শিদাবাদে বন্দী অবস্থায় থাকিতে থাকিতে, তথা হইতে পলায়ন করিয়া, কাশীমবাজারে উপস্থিত হন। কিন্তু তাহা বিশ্বাসযোগ্য নহে। তিনি কালিকাপুরের ওলন্দাজ কুঠীর অধ্যক্ষ ভিনেট্‌সাহেবের জামিনে নবাবের নিকট হইতে মুক্তি লাভ করেন, এবং মুর্শিদাবাদে অবস্থান করিতে থাকেন। এই সময়ে কলিকাতার অধ্যক্ষ ড্রেক ও অন্যান্য ইংরেজগণ কলিকাতা আক্রমণের পর ফল্‌তায় অবস্থিতি করিতেছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিংস, এই সময়ে নবাব সরকারের যাবতীয় সংবাদ তাহাদিগকে গোপনে প্রেরণ করিতেন। ক্লমে ক্ৰমে এই সংবাদ নবাবের কর্ণগোচর হইলে, হেস্টিংস ভীত হইয়া মুর্শিদাবাদ হইতে পলায়ন করেন। সম্ভবতঃ এই পলায়নসময়েই তিনি কাশীমবাজারে স্বীয় পরিচিত বন্ধু কান্তবাবুর আশ্রয়ে থাকিতে বাধ্য হন। পরে তথা হইতে চুনারে, অবশেষে ফল্‌তায় গিয়া ইংরেজদিগের সহিত মিলিত হন।

 কথিত আছে যে, যৎকালে হেস্টিংস নবাব-ভয়ে ভীত হইয়া, কাশীমবাজারে উপস্থিত হন, সে সময়ে তথায় প্রসকাশ্যভাবে কোন কুঠীতে বা গদিতে থাকিতে সাহসী হন নাই। তাঁহার পরিচিত বন্ধু কান্তবাবু আপনার ভীষণ বিপদ সম্মুখীন দেখিয়াও, নবাবের কঠোর-শাসনে ভীত না হইয়া, হেস্টিংসকে আশ্রয় দান করেন। ইহাও শুনিতে পাওয়া যায় যে, কান্তবাবু তাঁহার জন্য কোনরূপ খাদ্যদ্রব্যের আয়োজন করিতে পারেন নাই; গৃহে পান্তাভাত ও চিংড়ি মৎস্য মাত্র ছিল; ক্ষুৎপীড়িত হেস্টিংস তাহাই পরিতোষ-সহকারে আহার করিয়াছিলেন। নবাবের প্রহরিগণ তাঁহার

  ৪ Holwell's India Tracts, p. 193.

  ৫ Glieg's Memoir of Warren Hastings.