পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৭০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


লঙ্ঘন করা উচিত নহে। হেস্টিংস যে দোষ দেখাইয়া রানী ভবানীর হস্ত হইতে বাহারবন্দ কাড়িয়া লন, মণিবেগমের সময় সে বিচার যে কোথায় ছিল, তাহা বুঝিতে পারা যায় না। নাবালক নবাব মোবারক উদ্দৌলার অভিভাবক ধদি মণিবেগম হইতে পারেন তাহা হইলে রানী ভবানী যে একটি জমিদারীর রাজস্বসংগ্রহে অসমর্থা, এ কথা কে স্বীকার করিতে পারে? মণিবেগমের সময় যে আপত্তি উঠে নাই, এক্ষণে সেই আপত্তি করিয়া স্বীয় উদ্দেশ্য সমর্থন করা হইল। কাউন্সিলের সদস্য ফ্রান্সস্ সাহেব রানী ভবানীর পক্ষ হইয়া হেস্টিংসকে এইরূপ জানাইয়াছিলেন যে, মণিবেগম যখন স্ত্রীলোক হইয়াও নবাবের অভিভাবক নিযুক্ত হইয়াছেন, তখন রানী ভবানী কি জন্য কর সংগ্রহ করিতে পাইবেন না? কিন্তু হেস্টিংস তাঁহার কথায় কৰ্ণপাত করেন নাই। হেস্টিংস যাহা জেদ করিতেন, তাহা কার্যে পরিণত না করিয়া বিরত হইতেন না। কিন্তু তাঁহার এই যুক্তি পরে পরিবর্তিত ও বাহারবন্দ প্রদানের জন্য অন্য কৈফিয়ৎ সৃষ্ট হইয়াছিল। আমরা পরে তাহার উল্লেখ করিব।

 যাহা হউক, তিনি রানী ভবানীর নিকট হইতে বলপূর্বক বাহারবন্দ লইয়া প্রথমে ১১৮১ সাল ১৭৭৫ খ্রীঃ অব্দে কাস্তবাবুর পুত্র লোকনাথকে ইজারা দিলেন। পরে ১১৮৩ সালের (১১৭৯ খ্রীঃ অঃ) ৩রা ভাদ্র ৮২,৬৩৯ টাকায় ঐ ইজারা চিরস্থায়ী করা হয়। যে সময়ে লোকনাথকে প্রথমে ইজারা দেওয়া হয়, তৎকালে তিনি দশ বা একাদশ বৎসর-বয়স্ক বালকমাত্র। ১১ স্ত্রীলোকের হস্ত হইতে জমিদারী কাড়িয়া লইয়া বালকের হস্তে প্রদান করা হইল। এরূপ ন্যায়-বিচার কেহ দেখিয়াছেন কি? যদিও কান্তবাবুর বেনামীতে লোকনাথকে জমিদারী দেওয়া হয়, তথাপি প্রকাশ্যভাবে একটি বালকের হস্তে জমিদারী প্রদান করিতে তিনি কিছুমাত্র লজ্জা বোধ করেন নাই। ইহা লইয়া পীড়াপীড়ি করিলে, তিনি বলিয়াছিলেন যে, কান্তবাবুর বেনামীতে লোকনায়কে দেওয়া হইয়াছে এবং বেনামীতে জমিদারী দেওয়া এ দেশে প্রচলিত আছে। হেস্টিংস এইরূপে আত্মপক্ষ সমর্থন করিতে ত্রুটি করেন নাই। ইহা অপেক্ষা অধিকতর নির্লজ্জতার বিষয় আর আছে কি না, জানি না। স্ত্রীলোক বলিয়া রানী ভবানীর হস্ত হইতে বাহারবন্দ বিচ্যুত হইল। স্ত্রীলোক হইলে যদি দোষ হয়, তাহ হইলে, বোধ হয়, মহারানী স্বর্ণময়ীর নাম আজ কেহ শুনিতে পাইতেন না।

 হেস্টিংস বাহারবন্দ কান্তবাবুকে প্রদান করিলেন বটে, কিন্তু প্রজারা প্রথমতঃ তাঁহাকে কর প্রদান করিতে স্বীকৃত হইল না। যাহারা রানী ভবানীর অধিকারে বাস করিত, তাহারা সহজে অন্য লোকের নিগ্ৰহ ভোগ করিতে যাইবে কেন? দয়া যাঁহার নিত্যসহচরী, পরোপকার যাঁহার জীবনের মুখ্য ব্রত, যাঁহার নামে দারিদ্র্য দরিদ্রের কুটীর ছাড়িয়া দূর-দূরান্তরে পলায়ন করে, তাঁহার প্রজাবৰ্গ যে, তাঁহার নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন হইতে হৃদয়ে যথার্থ বেদনা পাইবে, ইহা বিচিত্র নহে। যাহারা তাঁহাকে

 ১১ Calcutta Review (1878)Warren Hastings in Lower Bengal.