পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

দৈর্ঘ্যে প্রস্থে ১১০ হস্তেরও অধিক হইবে। মস্‌জেদ, তোরণ, সমস্তই এই চত্বরে অবস্থিত। তোরণ পার হইয়া প্রায় ৮০ হাত পরে মস্‌জেদ; মস্‌জেদ ও তোরণের মধ্যস্থিত বিশাল প্রাঙ্গণ জঙ্গলে পরিপূর্ণ। কেবল তোরণ হইতে মস্‌জেদে যাইবার কৃষ্ণপ্রস্তর-মণ্ডিত পথটি আজিও দৃষ্ট হইয়া থাকে। চত্বরের পশ্চিমদিকে পঞ্চগম্বুজবিশিষ্ট বিরাট্‌ মস্‌জেদ অদ্যাপি দণ্ডায়মান থাকিয়া কালের আঘাত সহ্য করিতেছে। মস্‌জেদের ভিতর বসিয়া যাওয়ায় খিলানকরা গম্বুজগুলি বিদীর্ণ হইয়া গিয়াছে।[১] গম্বুজ পাঁচটি ব্যতীত চারিকোণে চারিটি ক্ষুদ্র মিনার ছিল; তাহার দুই একটি এখনও বর্তমান আছে। মস্‌জেদটি ইষ্টক-নির্মিত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাঙ্গলা ইষ্টক জমাইয়া কিরূপে এই বিশাল পঞ্চগম্বুজের খিলান নির্মিত করা হইয়াছিল, তাহা মনে করিতে গেলে আশ্চর্যান্বিত হইতে হয়।

 মস্‌জেদটি দৈর্ঘ্যে ৮৬।৮৭ হাত হইবে এবং প্রস্থে ১৬ হাতেরও অধিক। গম্বুজগুলির ধাতুনির্মিত চূড়া আজিও তাহাদের পতনোন্মুখ মস্তকে শোভা পাইতেছে। মস্‌জেদের প্রবেশদ্বারে প্রকাও কৃষ্ণপ্রস্তর নির্মিত চৌকাঠ। দ্বারের উপর এক খণ্ড কষ্টি প্রস্তরে ফারসী ভাষায় এইরূপ লিখিত আছে—“আরবের মহম্মদ উভয় জগতের গৌরব; যে ব্যক্তি তাঁহার দ্বারের ধূলি নহে, তাঁহার মস্তকে ধূলিবৃষ্টি হউক।” ঢাকায় সায়েস্তা খাঁর কন্যা পরীবিবির সমাধি-মন্দিরেও ঐরূপ লিখিত আছে। মস্‌জেদের মধ্যস্থলে পশ্চিমদিকের ভিত্তিতে কলমী লেখা। ইহার উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বের জানালা দুইটি আজিও বাঙ্গলার পূর্ব শিল্পের পরিচয় দিতেছে। অনেকগুলি গম্বুজ ভাঙ্গিয়া যাওয়ায় উপর হইতে ক্রমাগত ইষ্টক খণ্ড পতিত হইতেছে। এই মস্‌জেদ মধ্যে প্রবেশ করিতে মনে ভীতির সঞ্চার হয়। কেবল কপোত ও মধুমক্ষিকাগণ আপনাদিগের উপযুক্ত আবাসস্থান বিবেচনায় মস্‌জেদটিকে অধিকার করিয়া রাখিয়াছে এবং নীরব ও নির্জন স্থানে সময়ে সময়ে আপনাদিগের কণ্ঠস্বরে আপনারাই মুগ্ধ হইয়া থাকে। চত্বরের চারিপার্শ্বে মোসাফের ও কারীদিগের (কোরাণাধ্যায়ী) জন্য বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গৃহ ছিল। গৃহগুলি সমস্তই খিলানের, একটিতেও তীর বরগা নাই। এখনও তাহাদের ভগ্নাবশেষ নয়ন পথে পতিত হইয়া মুর্শিদকুলী খাঁর বিশাল কীর্তির পরিচয় দিতেছে। মস্‌জেদের পশ্চাদ্ভাগের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দুইটি অত্যুচ্চ অষ্টকোণ মিনার যেন গগনস্পর্শ করিবার জন্য দণ্ডায়মান রহিয়াছে। উত্তর-পশ্চিমের মিনারে যাইবার সুবিধা নাই; তাহার চারি দিক্‌ ভীষণ জঙ্গলে আবৃত। দক্ষিণ-পশ্চিমের মিনারে উঠিতে পারা যায়। সর্পগতিতে ৬৭টি সোপান অতিক্রম করিয়া মিনারের চূড়াতলে উঠিতে হয়। মধ্যে মধ্যে আলোক ও বায়ু প্রবেশের দ্বারও আছে। মিনারটি প্রায় ৪০ হস্ত উচ্চ হইবে; চূড়াতল হইতে ভূমি পর্যন্ত অংশ প্রায় ৩০ হস্ত।


  1. এখনও প্রায় সেই অবস্থায় আছে ক্রমশঃ ঐ বিদীর্ণ অংশগুলি বিস্তার লাভ করিতেছে।