পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৭৮
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

 পরিবর্তনশীল স্রোতস্বিনীর ন্যায় ভাগ্যলক্ষীও বৈচিত্র্যময়ী। নদীর যে তট এক্ষণে নানাবিধ শস্যরাশিতে পরিপূর্ণ হইয়া, শ্যামলতার পবিত্র রাজ্য বলিয়া প্রতীত হইতেছে, পরক্ষণে হয়ত মহাপ্লাবনে বিধৌত হইয়া, তাহা নিরবচ্ছিন্ন সিকতাস্তুপে পরিণত হইবে। যে স্থান গগনস্পশা ঁসৌধমালায় বিভূষিত হইয়া, প্রতিবিম্বচ্ছটায় নদীগর্ভে আপনাকে পুনঃ সৃষ্টি করিতেছে, দুই দিন পরে, হয়ত বাস্তবিকই নদীগর্ভে তাহার স্থান হইবে। আবার যে স্থান এক্ষণে সলিলমধ্যে অবস্থিতি করিয়া, তাহার প্রত্যেক পরমাণুর সহিত নিজের পরমাণুগুলিকে পলে পলে মিশাইয়া দিতেছে, কিছুকাল পরে, হয়ত, সে মস্তক উত্তোলন করিয়া, কুমে ক্রমে শ্যামল বৃক্ষরাজিতে অথবা নবীন সৌধমালায় পরিশোভিত হইয়া, হাস্য করতে থাকিবে। সেইরূপ যে ভাগ্যশীল ব্যক্তি বিশাল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হইয়া, সুবাসিত কক্ষে অর্ধনিমৗলিত অবস্থায় কত সুখস্বপ্ন দেখিতেছেন, দুই দিন পরে, হয়ত, তিনিও পথের ভিখারী হইয়া দাড়াইবেন। আর যে দরিদ্র পর্ণকুটীরে বসিয়া, নিরাশার বিভীষিকাময় চিত্রে শিহরিয়া উঠিতেছে ভাগ্যলক্ষীর কৃপায় কিছুকাল পরে দেখিবে, সে লক্ষাধিপতি হইয়া আনন্দহিল্লোলে ভাসিয়া চলিয়াছে। লীলাময়ী কমলার কৃপায় কান্তবাবু সামান্য অবস্থা হইতে লক্ষপতি হইতে লাগিলেন। যে জমিদারী অথবা মহাল লইতে তাঁহার ইচ্ছা হইতে লাগিল, তৎক্ষণাৎ তাহাই তাহার করায়ত্ত হইতে লাগিল। তাঁহার লালসা ব্রহ্মাওগ্রাসিনী না হইলেও, উত্তরোত্তর যে প্রসারিত হইতেছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। যেরূপে তিনি স্বীয় বাসনা পূর্ণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহ শেষ করিয়া উঠিতে পারিলে, বহু লক্ষাধীশ্বর হইতে পারিতেন। বঙ্গের অনেক লাভকর জমিদারী যে ভিন্ন ভিন্ন হস্ত হইতে বিচ্যুত হইয়া, তাহার করতলগত হইত, সেই সময়ে তাহার জমিদারীগ্রহণের কথা শুনিলে ইহা বেশ বুঝা যায়।

 ১৭৭৩ খ্রীঃ অব্দে কান্তবাবু প্রকাশ্য নীলামে ১৯টি পরগণার জমিদারী ৫ বৎসর মেয়াদে বন্দোবস্ত করিয়া লইয়াছিলেন। ১৭৭৩ খ্রীঃ আন্দের জন্য ১৩,৩৩,৬৬৪; ১৭৭৪ খ্রীঃ অব্দে ১৩,৪৬,১৫২; ১৭৭৫ খ্রীঃ অব্দে ১৩,৬৭,৭৯৬; ১৭৭৬ খ্রীঃ অব্দে ১৩,৮৮,৩৪৬ এবং ১৭৭৭ খ্রীঃ অব্দে ১৪,১১,৮৮৫ টাকায় তাহার সহিত পরগণাগুলির বন্দোবস্ত হয়। উক্ত ১৯ পরগণার মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের শেষে তিনি তিনটি পরগণা ইস্তাফা দিয়াছিলেন। ২২ এতদ্ভিন্ন তিনি কোন কোন জমিদারী ক্লয়ও করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে পঞ্চকূট রাজ্যের সাতাইশ-সতর বা চাটবালিয়াপুর জমিদারী সর্বপ্রধান। কয়লার খনিতে পরিপূর্ণ থাকায়, তাহা এক্ষণে অত্যন্ত লাভকর হইয়। উঠিয়াছে। হেস্টিংসসাহেবের প্রিয় বেনিয়ান কাস্তবাবুর রাজস্ববন্দোবস্ত তৎকালে যে, অতি সুবিধাজনক ছিল, তাহ বলা বাহুল্যমাত্র। হেস্টিংসের প্রিয়পাত্রগণকে স্বেরূপ

 ২২ мiirs History of India, Voll. III, p. 647. Also Beveridge's History of India, Vol. II.