পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাটরার মস্‌জেদ
২৩

 এই চূড়াতলে দাঁড়াইয়া পশ্চিমদিকে দৃষ্টিপাত করিলে, মুর্শিদাবাদ নগরের এক সুন্দর দৃশ্য নয়নপথে পতিত হয়। পূর্বে আরও সুন্দর বোধ হইত, এক্ষণে বৃক্ষাদির সংখ্যা অধিক হওয়ায়, মুর্শিদাবাদের সুন্দর চিত্রকে অনেকটা আবৃত করিয়া ফেলিয়াছে। তথাপি এক্ষণে যাহা আছে, তাহাও বড়ই মনোরম বলিয়া বোধ হয়। বিস্মৃতির ছায়াময় স্তর হইতে অনেক দিনের স্মৃতির অস্ফুট আলোকের ন্যায় সেই বহুদূরবিস্তৃত শ্যামল পত্ররাজির মধ্যে মুর্শিদাবাদের প্রধান প্রধান প্রাসাদগুলির দৃশ্য বড়ই সুন্দর বোধ হইয়া থাকে। অনেকক্ষণ ধরিয়া সেই মনোরম চিত্র দেখিতে ইচ্ছা হয়। গত ভূমিকম্পে[১] এই মিনারের শীর্ষদেশ ভগ্ন হইয়াছে। হয়ত মুর্শিদকুলী খাঁর শেষ বিরাট কীর্তি অচিরকাল মধ্যেই ধূলিরাশিতে পরিণত হইবে। যাঁহা হইতে মুর্শিদাবাদের নাম ও গৌরব, যিনি মুর্শিদাবাদকে বাঙ্গলার রাজধানী করিয়া সমগ্র জগতে স্বীয় গৌরব প্রচার করিয়াছিলেন, মুর্শিদাবাদ হইতে যদি তাঁহার শেষ চিহ্ন চিরদিনের জন্য গাথা লয়প্রাপ্ত হয় তাহা হইলে ইহা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বলিতে হইবে। জানি না, কাটরার মস্‌জেদের সংস্কার আর হইবে কিনা! যদিও অনেক অর্থব্যয়ের সম্ভাবনা বটে, তথাপি, মুর্শিদাবাদের স্থাপয়িতার শেষ চিহ্ন সর্বতোভাবে রক্ষা করা একান্ত আবশ্যক। এখন কেবল, তাঁহার সমাধিটির মধ্যে মধ্যে সংস্কার হইয়া থাকে।

 কাটরা মস্‌জেদ হইতে পশ্চিম দিকে কিছু দূরে আর একটা মস্‌জেদ অসম্পূর্ণ অবস্থায় রহিয়াছে; তাহাকে ফৌতি মস্‌জেদ কহে। মুর্শিদের দৌহিত্র নবাব সরফরাজ খাঁ উক্ত মস্‌জেদ নির্মাণ করিতে করিতে আলিবর্দী খাঁর সহিত যুদ্ধার্থে গিরিয়া প্রান্তরে গমন করেন। কিন্তু তাঁহাকে আর জীবিত অবস্থায় প্রত্যাগমন করিতে হয় নাই। তদবধি মস্‌জেদটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করিতেছে। ইহা কাটরার পঞ্চ-গম্বুজ মস্‌জেদের অনুকরণে নির্মিত হইতেছিল। ইহার পাঁচটি গম্বুজের মধ্যে দুইটি আজও বর্তমান আছে। সেই অসম্পূর্ণ মস্‌জেদও ভগ্নদশায় পতিত; বিশেষতঃ এক্ষণে জঙ্গলে আবৃত হইয়া ব্যাঘ্রাদি হিংস্র জন্তুর আবাসস্থান হইয়া উঠিয়াছে।

 কাটরার দক্ষিণ-পূর্বদিকে দুইটি অশ্বত্থতরুর, অথবা একটি অশ্বথতরুর দুইটি সংলগ্ন কাণ্ডের মধ্যস্থলে এক বিশাল কামান অবস্থিতি করিতেছে। এই কামানের নাম জাহানকোষা বা জগজ্জয়ী। এই স্থানে মুর্শিদকুলী খাঁর কামানাদি রক্ষিত হইত বলিয়া কথিত আছে। সেইজন্য এই স্থানটিকে আজিও সাধারণে তোপখানা কহিয়া থাকে। এই তোপখানার উত্তর দিয়া একটি ক্ষুদ্র নদী সর্পগতিতে আপনার ক্ষুদ্র কলেবরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গ তুলিয়া আপন মনে বহিয়া যাইতেছে। জাহানকোষা অনেকদিন পর্যন্ত ধরণীবক্ষে স্বীয় বিশাল বপু বিস্তার করিয়া অবস্থিতি করিতেছিল; ইহার পার্শ্বে অশ্বত্থ বৃক্ষ জন্মিয়া জাহানকোষাকে ভূতল হইতে কতকটা উর্ধ্বে উত্তোলন করিয়াছে। কামানটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২ হাত হইবে। বেড় ৩ হাতের অধিক, মুখের

  1. ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প