পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
কান্তবাবু
২৯৯

আমরা জানিতাম না। চিরকাল পুকুরচুরির কথা শুনিয়া আসিতেছি, কিন্তু কান্তবাবুর নিকট হইতে দালানলুঠের কথাও জানিতে পারি। এই সমস্ত ব্যতীত কান্তবাবুর আরও একটি লাভ হয়। চিরকালই কান্তবাবুর জমিদারীলাভের পিপাসাটা অত্যন্ত প্রবল ছিল। সে পিপাসা প্রবল হওয়ায় প্রভু হেস্টিংস তাহাও মিটাইয়াছিলেন। তিনি বারাণসীরাজ্য হইতে স্বীয় প্রিয়পাত্র কান্তকে বালিয়া নামক একটি জমিদারী জায়গীরস্বরূপ প্রদান করেন। বালিয়া এক্ষণে গাজীপুর জেলার অন্তর্ভূত; অদ্যাপি তাহা কাশীমবাজার রাজবংশের অধীন রহিয়াছে। সুতরাং আমরা দেখাইলাম যে, সাক্ষাৎ-সম্বন্ধে বারাণসীসংক্রান্ত ব্যাপারে লিপ্ত না থাকিলেও কান্তবাবুর লভ্যাংশ বড় কম হয় নাই। হেস্টিংসের সহিত যেখানে যে কোন ব্যাপারে গমন করিতেন, সেই স্থান হইতে নিজের সুবিধা করিয়া লইতে পারিতেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হইলে, মনুষ্যের সুবিধা আপনা হইতেই উপস্থিত হয়।

 কান্তবাবু হেস্টিংসের কিরূপ প্রিয়পাত্র ছিলেন এবং তাঁহার দ্বারা কিরূপে ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহভাজন হইয়াছিলেন, তাহা আমরা যথাসাধ্য প্রদর্শন করিতে চেষ্টা করিয়াছি। নিজের বেনিয়ানী ব্যতীত হেস্টিংসসাহেব কান্তবাবুকে আর একটি সরকারী কার্য প্রদান করেন, তাহা অবৈতনিক কি না জানা যায় না। সম্ভবতঃ বেতন থাকিতে পারে। কোম্পানীর বিচারালয়সমূহে জাতিঘটিত কোন তর্ক উপস্থিত হইলে, কান্তবাবুর উপর তাহার বিচারভার অর্পিত হইত। কিন্তু এই বিচারালয়ে উচ্চতর জাতিসমূহের বিচার হইত বলিয়া বোধ হয় না। কারণ, স্বয়ং হেস্টিংসসাহেব একস্থানে সে কথার উল্লেখ করিয়াছেন। আমরা এই বিচারালয়সম্বন্ধে যাহা কিছু অবগত হইয়াছি, তাহা নিম্নে প্রকাশ করিতেছি। জাল-করা অভিযোগে মহারাজ নন্দকুমার কারাগারে নিক্ষিপ্ত হইলে, কান্তবাবু জাতিঘটিত বিচারালয়ের প্রধান পদে প্রতিষ্ঠিত বলিয়া, নন্দকুমার কারাগারে সন্ধ্যা, তর্পণ ও আহারাদি করিতে পারেন কি না, এ বিষয়ে কান্তবাবুকে জিজ্ঞাসা করিবার জন্য কাউন্সিলের অধিবেশনে ক্লেভারিংসাহেব প্রস্তাব করেন। গবর্নর জেনারেল তাহাতে অমত করিয়া বলেন যে, কান্তবাবু কেবলই ছোট লোকদিগের জাতিঘটিত গোলযোগের বিষয় মীমাংসা করিয়া থাকেন এবং জাতিঘটিত কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত তাঁহার উপর নির্ভর করা যাইতে পারে না। কারণ তিনি স্বীয় ধর্মশাস্ত্রে অভ্যস্ত নহেন। গবর্নর বলেন যে, তিনি সেই বিচারালয়ের সর্বপ্রধান কর্তা এবং নিজেই স্বীকার করিতেছেন যে, হিন্দুধর্মসম্বন্ধে তিনি স্বয়ং কিছুই অবগত নহেন।৫২  হেস্টিংসসাহেবের উক্ত কথা হইতে দুইটি বিষয়ের বিবেচনা করা যাইতে পারে। একটি বাস্তবিকই কান্তবাবু হিন্দুশাস্ত্রের কিছুই অবগত না থাকায়, হেস্টিংস সত্য কথাই বলিয়াছিলেন। দ্বিতীয়তঃ পাছে কান্তবাবু কারাগারে নন্দকুমারের আহারাদিসম্বন্ধে কোনরূপ অমত প্রদান করেন এই ভাবিয়া কান্তবাবুর অনুপস্থিতি ইচ্ছা করিয়া


 ৫২ Selections from State Papers, Vol. II, p. 367.