পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩০০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

সদস্যদিগকে বুঝাইবার চেষ্টা পাইয়াছিলেন। কিন্তু হেস্টিংসের সেরূপ আশঙ্কার কোন কারণ ছিল না। কারণ কান্তবাবু নন্দকুমারকে বিপদগ্রস্ত করিবার জন্য একেবারে নিশ্চেষ্ট ছিলেন না। কান্তবাবু যে হিন্দুশাস্ত্রে অনভিজ্ঞ ছিলেন তাহাও যথার্থ, কারণ, তিনি উচ্চজাতিসম্ভূত ছিলেন না। সেইজন্য বোধ হয় যে, বাস্তবিকই তিনি নীচ লোকদিগের জাতিঘটিত বিবাদবিসংবাদের মীমাংসা করিতেন। তাঁহার নিজের উক্তি হইতেও তাহার সমর্থন হয়। আমরা এস্থানে তাহারও উল্লেখ করিতেছি।

 ফ্রান্সিস ও মন্সন কান্তবাবুর উপস্থিতির পক্ষেই মত প্রদান করেন, কাজেই কান্তবাবুকে উপস্থিত হইতে হয়। কান্তবাবুকে তাঁহার বিচারালয়ের ও কোন্ কোন্ বিষয়ের বিচার কিরূপভাবে করিতে হয়, তাহার কথা জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি নিম্নলিখিত উত্তর প্রদান করেন। কাউন্সিল গৃহের সম্মুখেই তাঁহার জাতিঘটিত বিষয়ের বিচারালয় অবস্থিত। জাতিনাশ ও বিবাহ প্রভৃতির বিষয়ে তিনি বিচার করিয়া থাকেন। তাঁহার সাহায্যের জন্য একজন দারোগা ও দুইজন মোহরের নিযুক্ত আছে। মুসলমানদিগের বিষয়, ভিন্ন বিচারালয়ে মৌলবীদিগের দ্বারা সম্পাদিত হয়। তাঁহার মীমাংসাই একেবারে শেষ নহে, যাহারা তাঁহার বিচারে সন্তুষ্ট না হয়, তাহারা গবর্নরের নিকট আপীল করিয়া থাকে। তাঁহাকে কোনও বিষয়ে আদেশ দিতে হইলে, গবর্নরের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। যাহারা উক্ত বিচারালয়ে দোষী স্থির হয়, তাহাদিগের স্বজাতিদিগকে ভোজ প্রদান করিবার জন্য অর্থদণ্ড দিতে হয়। বিচারালয়ে জরিমানার কোন নিয়ম নাই, অপরাধীরা তাঁহার আদেশ অমান্য করিলে, তাহাদিগের দুই এক দিন কারাবাসে থাকিবারও বিধি আছে। হেস্টিংসসাহেব গবর্নর হইবার পর হইতেই কান্তবাবু উক্ত বিচারালয়ে নিযুক্ত হন; ইতিপূর্বে অন্যান্য গবর্নরের বেনিয়ানগণও উত্ত কার্য করিতেন।

 জেনারেল ক্লেভারিং কান্তবাবুকে জিজ্ঞাসা করেন যে, স্নান করা হিন্দুধর্মের একটি প্রয়োজনীয় অঙ্গ কিনা? কান্তবাবু উত্তর দেন যে, লোকে সুস্থ থাকিলে ইহা করা সঙ্গত বটে, কিন্তু সেরূপ অবস্থা না হইলে সে করিয়া উঠিতে পারে না। এই সময়ে গবর্নর জেনারেল জিজ্ঞাসা করেন, কেহ সুস্থ শরীরে থাকিয়া স্নান না করিলে কোন অপরাধ হয় কিনা? কান্তবাবু উত্তর দেন যে, তাহাতে অপরাধ হয় কি না, তাহ ধর্মশান্ত্রে লিখিত আছে, আমি শাস্ত্র জানি না। পরে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তুমি ব্রাহ্মণ কিনা? উত্তর—আমি ব্রাহ্মণ নহি। সাধারণতঃ ব্রাহ্মণেরাই ধর্মানুষ্ঠান প্রতিপালন করিয়া থাকে কিনা জিজ্ঞাসা করিলে, কান্তবাবু উত্তর দেন যে, শাস্ত্রের আদেশ সকল জাতির প্রতিই সমান। তবে ব্রাহ্মণদিগের বিশেষ আদেশ তাহদের ধর্মগ্রন্থে লিখিত আছে, সে সকলের বিষয় আমি কিছুই অবগত নহি। আহারের পূর্বে স্নান করা আবশ্যক কিনা এই কথার উত্তরে কান্তবাবু বলেন যে, আহারের পূর্বে স্নানাহ্নিক করা নিয়ম বটে। কিন্তু যে স্থলে লোক স্নান করিতে পারে না, সে স্থলে আহারের পূর্বে আহ্নিক করিতে হয়। ছোট জাতিরা স্নান না করিয়াও আহার করিয়া থাকে। উহার