পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩০৮
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

বাচ্য করিতে ইচ্ছুক নহি। তবে স্বার্থসিদ্ধি ও উচ্চাশার বেদীতলে তিনি যে ন্যায়, ধর্ম, স্বদেশ ও স্বজাতি-প্রীতি বলি দিয়াছিলেন, তাহা অস্বীকার করা যায় না। ভগবান তাঁহাকে অপরিমিত বুদ্ধি ও ক্ষমতা প্রদান করিয়াছিলেন। তিনি ইচ্ছা করিলে দেশের যথেষ্ট মহোপকার সংসাধিত করিতে পারিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাহার বুদ্ধি ও ক্ষমতা কুপথেই পরিচালিত হইয়াছিল।

 বঙ্গের তৎকালীন রাজস্ববন্দোবন্ত গঙ্গাগোবিন্দ ব্যতীত সম্পন্ন হয় নাই, ইহা একটি জ্বলন্ত সত্য; এমন কি লর্ড কর্নওয়ালিসের অক্ষয় কীর্তি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সহিতও গঙ্গাগোবিন্দের সম্বন্ধ বিজড়িত রহিয়াছে। আজ যদি সেই গঙ্গাগোবিন্দকে আমরা ন্যায়পথে চলিতে দেখিতাম, যাঁহার উপর বাঙ্গলার ইংরেজ রাজত্বের সম্পূর্ণ ভার ছিল বলিলে অত্যুক্তি হয় না, গবর্নর জেনারেল যাঁহার করতলগত, আজ যদি ন্যায় ও ও ধর্মের বিশাল প্রবাহে তাঁহাকে ভাসমান দেখিতাম, তাহ হইলে জগতে বাঙ্গলার গৌরব ও সুনাম চিরবিঘোষিত হইত। দুঃখের বিষয়, সে সময়ে যে কয়জন বাঙ্গালীর সহিত ইংরেজ-রাজ্যের সম্বন্ধ ছিল, তাহাদের মধ্যে অধিকাংশই স্বার্থপর ও স্বদেশদ্রোহী। হেস্টিংসের অপূরণীয় অর্থলালসা মিটাইবার জন্য গঙ্গাগোবিন্দ যে সমস্ত কুকীর্তি রাখিয়া গিয়াছেন, তাহাতে জগৎসমক্ষে চিরকাল বাঙ্গালীকে হেয় বলিয়া পরিচয় দিতেছে। আমাদের দূরদৃষ্টবশতঃ তাই বৈদেশিকগণের মধুর বিশেষণে আমরা প্রতিনিয়ত অভিহিত হইয়া থাকি!

 আমরা প্রথমতঃ গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের পূর্বপুরুষগণের কিঞ্চিৎ বিবরণ প্রদান করিতে ইচ্ছা করিতেছি। গঙ্গাগোবিন্দের পূর্বপুরুষগণ অনেক দিন হইতে মুর্শিদাবাদের অন্তর্গত কান্দীতে বাস করিতেছিলেন। তাঁহারা জাতিতে উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ। উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থগণ বহুদিন হইতে মুর্শিদাবাদের ফতেসিংহ প্রভৃতি স্থানে আবাসস্থান স্থাপন করিয়াছিলেন। সাধারণতঃ কান্দীনিবাসী হরকৃষ্ণ সিংহ হইতে গঙ্গাগোবিন্দের ধারা গৃহীত হইয়া থাকে। হরকৃষ্ণ প্রথমতঃ কুসীদজীবীর ব্যবসায় করিতেন। পরে ক্রমে ক্রমে রেশমের ব্যবসায় আরম্ভ করিয়া, প্রচুর লাভ করিতে আরম্ভ করেন। মুর্শিদাবাদ চিরদিনই রেশমের ব্যবসায়ের জন্য বিখ্যাত; সুতরাং সুবিধারুমে রেশমের ব্যবসায় আরম্ভ করিলে তাহাতে যে বিশেষ উন্নতি হইবে, ইহা বড় আশ্চর্যের কথা নহে৷ মহারাষ্ট্রীয়দিগের আক্রমণের সময় হরকৃষ্ণ কান্দী হইতে পলায়ন করিয়া, বোয়ালিয়া নামক স্থানে বাসস্থান নির্দেশ করিতে বাধ্য হন। বোয়ালিয়া ভাগীরথীর পূর্বতীরে অবস্থিত ছিল। মহারাষ্ট্রীয়গণ ভাগীরথীর পশ্চিম তীর অধিকার করিয়া অনেক দিন আপনাদের শাসনে রাখিয়াছিল এবং তাহাদের অত্যাচারে বাঙ্গলায়