পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ
৩০৯

প্রজাগণের দুর্দশার একশেষ হইত। কান্দী ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে হওয়ায়, হরকৃষ্ণ তাহা পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হন। হরকৃষ্ণ অনেক টাকা নজরানা দিয়া মুর্শিদাবাদের নবাবের নিকট হইতে বোয়ালিয়া গ্রাম নিজস্ব করিয়া লন; তাহার সঙ্গে সঙ্গে আরও কতিপয় গ্রাম গ্রহণ করিয়াছিলেন। বোয়ালিয়া তদবধি কান্দী রাজবংশীয়দের সম্পত্তিমধ্যে পরিগণিত হয়। বোয়ালিয়া হইতে পুনর্বার তাঁহারা কান্দীতে আসিয়া বাস করেন।

 হরকৃষ্ণের পুত্র মুরলীধর হইতে নারায়াণসিংহ, গৌরাঙ্গসিংহ ও বিহারীসিংহ ভ্রাতৃত্রয়ের উৎপত্তি হয়। ইঁহাদের মধ্যে গৌরাঙ্গসিংহ নিজ ক্ষমতাগুণে নবাবসরকারে কার্য প্রাপ্ত হন। তাঁহার নাম হইতে কান্দীবংশীয়দের যশ প্রথমতঃ বাঙ্গলার সর্বত্র রাষ্ট্র হয়। গৌরাঙ্গসিংহ কাননগো বঙ্গাধিকারী মহাশয়দিগের অধীনতায় কার্য করেন। তৎকালে কাননগোমহাশয়দিগকে যাবতীয় জমাজমির নির্দেশসম্বন্ধীয় কাগজপত্র রাখিতে হইত। গৌরাঙ্গসিংহের ভূমি-সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যুৎপত্তি থাকায়, তিনি তাঁহদের অধীন কর্মচারী হইয়া নিজের প্রভূত ক্ষমতাবলে যথেষ্ট প্রতিপত্তি লাভ করেন এবং মজুমদার উপাধি প্রাপ্ত হন। গৌরাঙ্গসিংহ অত্যন্ত ভাগ্যবান্‌ পুরুষ ছিলেন। তিনি বহুল পরিমাণে অর্থ উপার্জন দ্বারা অনেক মহাল, তালুক ও লাখরাজভূমি ক্রয় করিয়া প্রচুর সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া উঠেন। দেবসেবা প্রভৃতিতে তাঁহার যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, তিনি এক সময়ে কান্দীতে একটি সুন্দর অট্টালিকা নির্মাণ করিবার ইচ্ছা করিয়া, নবাব সিরাজউদ্দৌলার হীরাঝিলের উপরিস্থিত এমতাজমহাল প্রাসাদের কার্ণিসের অনুকরণে স্বীয় অট্টালিকা প্রস্তুত করেন। সিরাজ এই সংবাদ শুনিয়া সেই অট্টালিকা ভগ্নস্তূপে পরিণত করিতে আদেশ দিয়া গৌরাঙ্গসিংহকে বন্দী করিয়া আনিতে বলেন। তৎকালে সাধারণ লোকে নবাববাদশাহদিগের অনুকরণ করিতে পারিত না; করিলে, তাহাদিগকে যথেষ্ট লাঞ্ছনা ভোগ করিতে হইত, এরূপ দৃষ্টান্ত অনেক শুনিতে পাওয়া যায়।

 গৌরাঙ্গসিংহের কোনও পুত্রাদি ছিল না। তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বিহারীসিংহের দীনদয়াল, রাধাকান্ত, রাধাচরণ ও গঙ্গাগোবিন্দ নামে চারি পুত্র হয়। গৌরাঙ্গ রাধাকান্তকে দত্তকপুত্ররূপে গ্রহণ করেন; রাধাকান্ত অনেক স্থলে রাধাগোবিন্দ বলিয়া অভিহিত হইয়াছেন। গৌরাঙ্গসিংহের পর রাধাকান্ত তাঁহার পদে নিযুক্ত হন এবং নিজ উদ্যমবলে অনেক সম্পত্তি উপার্জন করিয়াছিলেন। নবাব আলিবর্দী ও সিরাজউদ্দৌলার সময়ে রাধাকান্ত রাজস্ববিষয়ে অনেক উন্নতি দেখাইয়াছিলেন। কোম্পানীর দেওয়ানীগ্রহণের পরও তিনি ভূমিসম্বন্ধীয় অনেক বন্দোবস্ত করিয়া পুরস্কারস্বরূপ হুগলীতে রাজস্ব আদায়ের ভার ও একখানি সায়ার মহাল প্রাপ্ত হন। নবাব
 ২ Calcutta Review (1874), The Territorial Aristocracy of Bengal. (The Kandi Family.)