পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৩৬
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

তাহার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। তাহার ন্যায় ধর্মপ্রাণ পুরুষ বাঙ্গালী জাতির মধ্যে দুর্লভ। আজিও সমগ্র উত্তর-ভারতবর্ষের অধিবাসিগণ প্রতিনিয়ত লালাবাবুর, জয় কীর্তন করিয়া থাকে। উত্তর-ভারতবর্ষে এমন কেহই নাই যে, লালাবাবুর সদনুষ্ঠানের বিষয় অবগত নহে। এই সমস্ত সদনুষ্ঠানের জন্য তিনি উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে পরগণা অনুপসহর ও মথুরার কিয়দংশ ক্রয় করিয়াছিলেন।

 এই সময়ে বৃন্দাবনে কৃষ্ণদাস বাবাজী নামে এক পরম সন্ন্যাসী বাস করিতেন। তিনি লালাবাবুর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। লালাবাবু বৃন্দাবনধামে কৃষ্ণচন্দ্রবাবাজীর মূতি প্রতিষ্ঠিত করিয়া মর্মর প্রস্তরে তাহার এক বিশাল মন্দির মির্মাণ করিয়া দেন। রাজপুতানা হইতে সেই সকল প্রস্তর আনীত হয়! রাজপুতানার কোন রাজা তাহাকে বিনামূল্যে মর্মরপ্রস্তর সকল প্রদান করেন। সেই সময়ে উক্ত রাজার সহিত ব্রিটিশ গবর্নমেন্টের সন্ধির প্রস্তাব হইতেছিল। রাজা সম্মতিদানে বিলম্ব করায়, দিল্লীর রেসিডেন্ট মেটকাফসাহেব লালবাবুর পরামর্শে এইরূপ হইতেছে সন্দেহ করিয়া, তাহাকে দিল্লীতে ধৃত করিয়া লইয়া যান। পরে তাহার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না থাকায় এবং তাহার সংসারত্যাগের কথা শুনিয়া, তাহাকে বিষয়-নিলিপ্ত জানিয়া, মুক্তিদান করিতে বাধ্য হন। গোবর্ধনের ছায়াময় সানুপ্রদেশে অশ্বপদাঘাতে লালবাবুর প্রাণবায়ুর অবসান হয়।

 লালাবাবুর মৃত্যুর সময় তাহার পুত্র শ্রীনারায়ণ সিংহ অত্যন্ত অল্পবয়স্ক ছিলেন। তাঁহারা মাতা কাত্যায়নী তাহার অভিভাবক নিযুক্ত হন। রানী কাত্যায়নীও অনেক সদনুষ্ঠান করিয়াছিলেন; পরোপকারের জন্য তাহার ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। রানী কাত্যায়নী ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করিয়া, বেলুড়ের বাটীতে এক অনুমেরু ব্রত-প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীনারায়ণ মৃত্যুকালে তাহার দুই পত্নীকে পোষ্যপুত্র গ্রহণ করিতে অনুমতি দিয়া যান। জ্যেষ্ঠা পত্নী প্রতাপচন্দ্র ও কনিষ্ঠা ঈশ্বরচন্দ্রকে পোষ্যপুত্র গ্রহণ করেন। প্রতাপচন্দ্র অনেক সৎকার্যের জন্য গবর্নমেন্ট হইতে রাজাবাহাদুর উপাধি প্রাপ্ত হন। কান্দীর ইংরেজী বিদ্যালয় প্রতাপচন্দ্রেরই প্রতিষ্ঠিত। ঈশ্বরচন্দ্রের গানবাদ্যে অত্যন্ত অনুরাগ ছিল। তাহারই যত্নে বেলগাছিয়ার উদ্যানে কলিকাতার অনেক সম্ভ্রান্ত লোক মিলিত হইয়া মাইকেল মধুসূদনের শর্মিষ্ঠা নাটক অভিনয় করেন।

 প্রতাপচন্দ্রের কুমার গিরিশচন্দ্র, পূর্ণচন্দ্র, কান্তিচন্দ্র ও শরচ্চন্দ্র নামে চারি পুত্র হয়। গিরিশচন্দ্র কান্দীতে এক দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করিয়াছেন। ঈশ্বরচন্দ্রের একটি মাত্র পুত্র হয়; ইনিই বিখ্যাত ইন্দ্রচন্দ্র। ইনি অত্যন্ত তেজস্বী ছিলেন। যৌবনারম্ভে ইন্দ্রচন্দ্র অত্যন্ত উচ্ছঙ্খল হইয়া উঠেন; পরে তাহার বেগ অনেক পরিমাণে প্রশমিত হয়। ইন্দ্রচন্দ্র অকালে ইহলোক পরিত্যাগ করিয়াছেন। তিনি স্বীয় পত্নীকে দত্তক গ্রহণে অনুমতি দিয়া যান; তদনুসারে তাহার পত্নী ভ্রাতাকে দত্তক গ্রহণ করিয়াছেন। কান্দীর রাজবংশ এক্ষণে কলিকাতার নিকট পাইকপাড়ায় বাস করিতেছেন। মধ্যে মধ্যে তাঁহারা কান্দীতে আগমন করিয়া থাকেন।