পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রোশনীবাগ
৩১

ছিলেন, আবার এক্ষণে তাঁহাদের ঘোর দুর্দশা উপস্থিত হইয়াছে। তাঁহাদের পূর্বগৌরবের কিছুমাত্র নিদর্শন নাই। শেঠদিগের বিশাল ভবন এক্ষণে ভগ্নস্তুপে পরিণত। তাঁহাদিগের বংশধর জীবিকা-নির্বাহের জন্য বৃত্তির আশায় ব্রিটিশ গবর্নমেণ্টের দ্বারস্থ হইয়া প্রত্যাখ্যাত হইয়াছিলেন। যাঁহারা অর্থ ও প্রাণ দিয়া ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যস্থাপনের পূর্ণ সহায়তা করিয়াছিলেন, পরে তাঁহাদের বংশধর ভিক্ষাভাণ্ড হস্তে লইয়া ব্রিটিশ গবর্নমেণ্টের দ্বারে উপস্থিত হইলেন; গবর্নমেণ্ট একবার ফিরিয়াও চাহিলেন না! এ দৃশ্য দেখিতে বড়ই কষ্টকর বোধ হয়। যাঁহাদিগের অর্থে কত লোক বিপুল সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়াছিল, পরে তাঁহাদের বংশধর পথের ভিখারী! ইহা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কি আছে? এক্ষণে শেঠবংশীয়দের যেরূপ দুর্দশা ঘটিয়াছে, তাহাতে অধিক দিন যে জগৎশেঠদিগের নাম ধরণীবক্ষে বিরাজ করবে, সেরূপ আশা করা যায় না। সমস্তই সেই পরিবর্তনশীল কালের খেলা বলিতে হইবে।

 শেঠবংশীয়দের আদিনিবাস যোধপুরের অন্তর্গত নাগর প্রদেশ। তাঁহারা পূর্বে শ্বেতাম্বর জৈন সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন; পরে বৈষ্ণব-ধৰ্ম অবলম্বন করেন। আবার তাঁহারা জৈন ধর্ম গ্রহণ করিয়াছেন। যতদূর অবগত হওয়া যায়, তাহাতে এইরূপ সিদ্ধান্ত হয় যে, হীরানন্দ নামে তাঁহাদের জনৈক পূর্বপুরুষ নাগর হইতে ভাগ্য-পরীক্ষার্থে পাটনায় উপস্থিত হন। হীরানন্দের সম্বল তাদৃশ অধিক ছিল না; কাজেই বাণিজ্যব্যাপারে তিনি ভালরূপ সুবিধা করিতে পারেন নাই। এরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, ভাগ্যলক্ষীর অনুগ্রহভাজন হইতে না পারিয়া, হীরানন্দ সর্বদাই বিষন্ন থাকিতেন। এক দিন তিনি ব্যথিতচিত্তে নগরের বহির্ভাগে একটি ক্ষুদ্র বনমধ্যে প্রবেশ করেন। সন্ধ্যা হইল, তথাপি হীরানন্দ বন হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইলেন না। সহসা একটি আর্তনাদ তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইল; তিনি কিয়দ্দূর অগ্রসর হইয়া একটি ভগ্ন অট্টালিকা দেখিতে পাইলেন। তাহার একটি প্রকোষ্ঠে জনৈক বৃদ্ধ মৃত্যুযাতনায় অধীর হইয়া আর্তনাদ করিতেছিল। বৃদ্ধের তথাবিধ শোচনীয় অবস্থা দেখিয়া, হীরানন্দের হৃদয় বিগলিত হইল। তিনি যথাসাধ্য তাহার সেবা করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাঁহার চেষ্টায় কোনরূপ ফলোদয় হইল না। অচিরকালমধ্যে বৃদ্ধ ইহজীবনের লীলা শেষ করিল। হীরানন্দের সেবায় তুষ্ট হইয়া বৃদ্ধ মৃত্যুর কিছু পূর্বে গৃহের একটি কোণে অঙ্গুলিসঙ্কেত করিয়া যায়। হীরানন্দ সেই স্থান হইতে প্রচুর ধন লাভ করেন। এইরূপে তাঁহার ভাগ্যোদয় ঘটে। অল্পকাল মধ্যে হীরানন্দ বিপুল সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া, আপনার সাত পুত্রকে ভারতের সাত স্থানে গদীয়ানের কার্যে নিযুক্ত করিলেন। তাঁহার কনিষ্ঠ পুত্র মাণিকচাঁদ হইতে মুর্শিদাবাদের জগৎশেঠদিগের উৎপত্তি।

 যৎকালে ঢাকা নগরী বাঙ্গলার রাজধানীপদে প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেই সময়ে মাণিকচাঁদ ঢাকায় আগমনপূর্বক আপনার গদী সংস্থাপন করেন। এই সময়ে মুর্শিদকুলী খাঁ বাঙ্গলার দেওয়ান হইয়া ঢাকায় উপস্থিত হন। রাজস্বসম্বন্ধে মুর্শিদের হস্তে সমুদায়