পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জগৎশেঠ
৩৩

করেন। ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে দয়াবাগে তাঁহার স্মৃতিস্তম্ভ অনেকদিন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল; এক্ষণে ভাগীরথী তাহাকে নিজ গর্ভে স্থান দান করিয়াছেন।

 মাণিকচাঁদ অপুত্রক থাকায় স্বীয় ভাগিনেয় ফতেচাঁদকে আপনার পোষ্যপুত্র ও উত্তরাধিকারী মনোনীত করিয়া যান। বারাণসীর প্রধান শেঠ উদয়চাঁদের সহিত মাণিকচাঁদের ভগিনী ধনবাঈ-এর বিবাহ হয়। ফতেচাঁদ তাঁহাদেরই পুত্র। মাণিকচাঁদের জীবিত অবস্থায় ফতেচাঁদ মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন এবং তাঁহার গদীর কার্য পরিদর্শন করিতে আরম্ভ করেন। মাণিকচাঁদের মৃত্যুর পর হইতে তিনি প্রকৃত গদীয়ান হইয়া উঠেন। শেঠবংশীয়দের মধ্যে ফতেচাঁদই প্রথম “জগৎশেঠ” উপাধি লাভ করিয়াছিলেন। রিয়াজুস্‌-সালাতীন গ্রন্থে লিখিত আছে যে, যৎকালে সম্রাট্‌ ফরখ্‌শের দিল্লীর সিংহাসন অধিকারের জন্য চেষ্টা করিতেছিলেন, সেই সময়ে তিনি বারাণসীর বিখ্যাত মহাজন নগরশেঠের নিকট হইতে অর্থসাহায্য গ্রহণ করেন। সম্রাট হওয়ার পর তিনি প্রত্যুপকারস্বরূপ নগরশেঠের ভাগিনেয় ও গোমস্তা ফতেচাঁদকে “জগৎশেঠ” উপাধিতে ভূষিত করিয়া বাঙ্গলার রাজস্বের ফৌতদারী (পোদ্দারী) পদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন।[১] কিন্তু ফতেচাঁদ মাণিকচাঁদেরই ভাগিনেয়; তাঁহার পিতা উদয়চাঁদ বারাণসীতে বাস করিতেন। রিয়াজের নগরশেঠ মাণিকচাঁদ কিনা বুঝা যায় না। দুইজনে এক ব্যক্তি হইলেও মাণিকচাঁদ বারাণসীতে বাস করিতেন না। ফতেচাঁদের পিতা উদয়চাঁদই তথায় থাকিতেন। আবার ফতেচাঁদের ফার্মান হইতে জানা যায় যে, তিনি মহম্মদ শাহার নিকট হইতে ১৭২৪ খ্রীঃ অব্দে “জগৎশেঠ” উপাধি প্রাপ্ত হন। জগৎশেঠ উপাধির সঙ্গে ফতেচাঁদ সম্মানের চিহ্নস্বরূপ মতির কুণ্ডল ও হস্তী প্রভৃতি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। শেঠদিগের বংশবিবরণী হইতে এইরূপ জানা যায়, সম্রাট মহম্মদ শাহ ফতেচাঁদের প্রতি এরূপ সন্তুষ্ট ছিলেন যে, এক সময়ে কোন কারণে তিনি মুর্শিদকুলী খাঁর উপর বিরক্ত হওয়ায়, তাঁহাকে পদচ্যুত করিয়া ফতেচাঁদকে বাঙ্গলার নবাবী প্রদান করিতে ইচ্ছা করেন। ফতেচাঁদ নবাবীগ্রহণে অস্বীকৃত হইয়া বাদশাহকে অবগত করান যে, নবাব মুর্শিদকুলীর অনুগ্রহেই তাঁহারা দেশ-মধ্যে ধনী ও সম্মানী হইয়া উঠিয়াছেন; সুতরাং তাঁহাদের এরূপ উপকারী বন্ধুর পদ গ্রহণ করিতে তিনি কদাচ ইচ্ছুক নহেন। তাঁহার আন্তরিক ইচ্ছা যে, বাদশাহ ক্রোধ পরিত্যাগ করিয়া নবাবের প্রতি পুনর্বার পূর্বের ন্যায় কৃপাদৃষ্টি করেন। বাদশাহ ইহাতে ফতেচাঁদের উপর অত্যন্ত প্রীত হইয়া, নবাবকে এইরূপ আজ্ঞাপত্র লিখিয়া পাঠান যে, এখন হইতে সমস্ত রাজকার্যে শেঠদিগের পরামর্শ গ্রহণ করিতে হইবে। বাদশাহ-দরবার হইতে বাঙ্গলার নাজিমকে সময়ে সময়ে যে-সমস্ত খেলাত প্রদত্ত হইত তত্তুল্য আর একটি শেঠদিগকে পাঠাইতে সম্রাট্‌ কখনও বিস্মৃত হইতেন না।

 ১৭২৫ খ্রীঃ অব্দে মুর্শিদকুলী খাঁর মৃত্যু হইলে, সুজা উদ্দীন বাঙ্গলার সুবেদারী

  1. Riyaz-us-salatin, p. 274