পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৯৮
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

প্রাণপ্রতিমেষু পরমশূভাশীর্বাদশিবঞ্চ বিশেষ তোমার মঙ্গল সর্বদা বাসনাকরনক অত্র কুশল প্রস্তুঃ ২৫ তারিখের পত্র ২৭ রোজ রাত্রে পাইয়া সমাচার জানিলাম শ্রীযুত ফেরত আলি খাঁ-এর এখানে আইসনের সম্বাদ জে লিখিয়াছিলে এতক্ষণতক পদুচেন নাই পচিলেই জানা জাইবেক। শ্রীযুত রায় জগৎচন্দ্র বিষ রোজের পর বাটী হইতে আসিয়াছেন যেমত ২ কুচেষ্টা পাইতেছেন তাহা জানাই গেল তিনি যথা ২ জাউন ফলত কার্যের দ্বারাতেই বুঝিবেন স্পষ্ট হইয়া আপনার মন্দ করিতেছেন সে সকল লোকেও অবশ্য বুঝিবেক[১] তুমি শ্রীযুত মেন্ত মেদলটিন সাহেবের[২] নিকট যাতায়াত করিবে এক খত তাহাকে লিখিলাম দিয়া নিরালা সকল কহিবে ও সুনিবে যখন যেরূপ কথোপকথন হয় তাহার মত। করিবে হি চিত্তে জানেন জে আমার কথা ক্রমেই ইনি কার্য করিতেছেন সুন্দররূপ তাহার সহিত মিলিবে কোন বিশ উদ্বিগ্ন নহিবে শ্রীযুত লাল সুবংশ রায় শয়ং জানাইতেছেন ঞিহার স্থানে বিস্তারিত জ্ঞাত হইয়া কার্য করিবে শ্রীযুত লালা ডোমন। রায়[৩] লিখিয়াছেন ফীলখানার দারোগা শ্রীযুত হাজি মুস্তফা তাহার সহিত বিপক্ষত।

- - - - - -

  1. রায় জগচ্চন্দ্র বর্তমান কুঞ্জঘাটা রাজবংশের আদিপুরুষ; ইনি মহারাজ নন্দকুমারের জামাতা। মহারাজের জ্যেষ্ঠা কন্যা সম্মানীর সহিত জগচ্চন্দ্রের বিবাহ হয়। মহারাজ নন্দকুমার গুরুদাসের উন্নতির জন্য চেষ্টা করায় জগচ্চন্দ্র তাহাদের প্রতি বিরুদ্ধ হন। এমন কি অবশেষে মহারাজের প্রধান শত্রু মোহনপ্রসাদের সহিত মিলিত হইয়া জগচ্চন্দ্র মহারাজের বিরুদ্ধে সেই জাল-করা মোকর্দমার অনেক কার্যও করিয়াছিলেন। মহারাজ অনেকস্থলে জগচ্চন্দ্রের বিরুদ্ধভাবের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। এই পত্র হইতে তাহা আরও স্পষ্টীকৃত হইতেছে।
  2. মেস্ত্র মেদলটীন=মিস্টার মিডলটন। মিডলটন সেই সময়ে মুর্শিদাবাদ দরবারের চীফ ছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিংসের আদেশে তিনি মহম্মদ রেজা খাকে ধৃত করিয়া কলিকাতায় পাঠান। এই পত্রে লেখার অব্যবহিত পরেই মহম্মদ রেজা খা ঁবিচারার্থে কলিকাতায় প্রেরিত হন। মহারাজ নন্দকুমারের সহিত রেজা খার ভয়ানক প্রতিদ্বন্দিতা ছিল। মহম্মদ রেজা খার পদচ্যুতির পর রাজা গুরুদাস নিজামতের দেওয়ান হন। ওয়ারেন হেস্টিংসের আগমনের পূর্বেই রেজা খার নামে অভিযোগ উপস্থিত হয়, এবং ডিরেক্টারগণ তাহাকে ধৃত করিয়া আনয়নের জন্য হেস্টিংসকে আদেশ দেন। হেস্টিংস কর্মভার গ্রহণ করিয়াই রেজা খার বিচার আরম্ভ করেন। এই পত্রে মিডলটনের সহিত যে পরামর্শের কথা লিখিত হইয়াছে, সম্ভবতঃ তাহা রেজা খা ঁঘটিত কোন বিষয় হইবে। অবশ্য অন্য কোন রাজনৈতিক ব্যাপারেও হইতে পারে।
  3. নন্দকুমারের জাল-করা অভিযোগে লাল ডোমনসিংহ নামে এক ব্যক্তি মহারাজের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছিল। লাল ডোমনরায় ও লালা ডোমনসিংহ এক ব্যক্তি কিনা বলিতে পারা যায় না। ৬ হাজি মুস্তফা সায়র মুতাক্ষরীন নামক ফার্সী গ্রন্থে ইংরেজী অনুবাদক। ইনি একজন ফরাসী। ইহার পূর্ব নাম রেমণ্ড, পরে ইনি মুসলমানধর্ম গ্রহণ করিয়া হাজি মুস্তফা উপাধি ধারণ করেন। মুতাক্ষরীনের ইংরেজী অনুবাদের ভূমিকায় লিখিত আছে যে, ইনি জীবিকার জন্য নানা স্থান ভ্রমণ করিয়া পরে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারিগণের অনুকম্পায় মুর্শিদাবাদে একটি কার্যে নিযুক্ত হন। কিন্তু কি কার্য, তাহা ইনি স্বয়ং গ্রন্থে উল্লেখ করেন নাই। এই পত্র হইতে জানা যাইতেছে যে, ইনি ফীলখানার দারোগা হইয়াছিলেন। মুস্তফা মুশিদাবাদ হইতে পরে কলিকাতায় আসিয়া বাস করেন।