পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জগৎশেঠ
৩৫

এ কথাও বুঝাইয়া বলিলেন। নবাব তাঁহার কথা শুনিয়া প্রথমে বিরত হইয়াছিলেন। কিন্তু অবশেষে অদমনীয় কৌতুহলের বশবর্তী হইয়া, লোক পাঠাইয়া জগৎশেঠের বাটী অবরোধপূর্বক সেই বালিকাকে নিজ বাটীতে আনয়ন করেন, এবং দর্শনপিপাসা মিটাইয়া তাহাকে পুনঃপ্রেরণ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাকে স্পর্শপর্যন্ত করেন নাই।

 জগৎশেঠের গৃহলক্ষীকে নিজ ভবনে লইয়া যাওয়ায়, সরফরাজের সিংহাসন কম্পিত হইয়া উঠে বলিয়া ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ নির্দেশ করিয়া থাকেন। তাঁহারা আবার এরূপ ভাবও প্রকাশ করেন যে, সরফরাজের ইন্দ্রিয়লালসা পরিতৃপ্তির আশায় তাহাকে নিজ অধিকারস্থ করিবার ইচ্ছা করিয়াছিলেন।[১] আমরা কিন্তু তাঁহাদের নিজের লিখিত বর্ণনানুসারে একটি কিঞ্চিন্যূন একাদশবর্ষীয়া বালিকার প্রতি কুঅভিপ্রায় প্রকাশের কোন অর্থ বুঝিতে পারি না। যে দেশে বিংশতির অধিক বয়স্ক রমণীও বালিকাপদবাচ্য হইয়া থাকে, সে দেশের ঐতিহাসিকগণ একটি দশবর্ষীয়া বালিকার প্রতি জনৈক অধিকবয়স্ক পুরুষের কু-অভিপ্রায়ের কথা কেমন করিয়া ব্যক্ত করিলেন, তাহা তাঁহারাই বলিতে পারেন। তাহার পর, তাঁহাদের লিখিত ঘটনা সায়র মুতাক্ষরীন বা রিয়াজুস্ সালাতীন প্রভৃতি দেশীয় কোন গ্রন্থেই দৃষ্ট হয় না। সুতরাং এ বিষয়ের সত্যাসত্য যে সবিশেষ অনুধাবনীয়, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। ইংরেজ ঐতিহাসিকেরা যে-স্থানে দেশীয় শাসন-কর্তৃগণের কোনরূপ ছিদ্র পাইয়াছেন, সেইখানে তাহা অতিরঞ্জিত করিতে ত্রুটি করেন নাই।


  1. He (Futhaah Chund) had about this time married his youngest grandson named Seet Mohtab Roy to a young creature of exquisite beauty, aged about eleven years. The fame of her beauty coming to the ears of the Soubah he burned with curiosity and lust for the possession of her, and sending for Jaggaut Seet demanded a sight for her.” (Holwell's Interesting Historical Events. Pt. I. Chapt. II. p. 70. অর্মে প্রথমতঃ lust for possession না লিখিয়া কেবল curiosity-ই লিখিয়াছেন। কিন্তু তাহার পর লিখিয়াছেন,—“The young woman was sent to the palace in the evening, and after staying there a short space, returned, unviolated indeed, but dishonoured to her husband. (Orme. Vol. II, p. 30.) unviolated কথায় তাঁহারও মনোগত ভাব বেশ বুঝা যাইতেছে। এই ঘটনা উপলক্ষ করিয়া বাবু নবীনচন্দ্র সেন পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলাকে জগৎশেঠের অন্তঃপুরে প্রবেশ করাইয়াছেন, এবং জগৎশেঠের মুখ দিয়া তাহা প্রকাশও করাইয়াছেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকদিগের মতে সরফরাজ নবীনবাবুর জগৎশেঠের পরিণীতা ভার্যাকেই নিজ প্রাসাদে লইয়া যান, তাঁহারই নাম মহাতাপ রায়। সিরাজ ঐরূপ কোন গর্হিত কার্য করেন নাই। দুঃখের বিষয় মুর্শিদাবাদের নবাবদিগের মধ্যে যাহার যে-কোন সত্য বা মিথ্যা দোষ ছিল, সমস্তই হতভাগ্য সিরাজের স্কন্ধে আসিয়া পড়িয়াছে। মৎপ্রণীত “মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে” ইহার বিস্তৃত আলোচনা সাধারণে দেখিতে পাইবেন।