পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
জগৎশেঠ
৪১

উক্ত পত্র লিখিয়াছেন। তাঁঁহারা জগৎশেঠের প্রতিনিধি আমীরচাঁদ বা আমীন চাঁদের (উমিচাঁদ) দ্বারা পত্রাদি পাঠাইতেন। ৫ই সেপ্টেম্বর ইংরেজেরা জগৎশঠকে আর এক পত্র পাঠাইতে চান। কিন্তু আমীরচাঁদ নিজের কোন কারণবশতঃ তাহা পাঠাইতে অস্বীকৃত হন। ২৩শে নবেম্বর ফলুত হইতে মেজর কিলপ্যাট্রিক পুনর্বার জগৎশেঠকে লিখিয়া পাঠান যে, তাহারই উপর সমস্ত বিষয় নির্ভর করিতেছে এবং একমাত্র তাহারই দ্বারা তাঁহারা নবাবের সহিত বিবাদনিম্পত্তির আশা করেন। এই সময়ে ওয়ারেন্‌ হেস্টিংস কাশীমবাজার কুঠী হইতে বন্দী হইয়া মুর্শিদাবাদে অবস্থিতি করিতেছিলেন। তিনিও আপনাদিগের উদ্ধারার্থ গোপনে জগৎশেঠের সহিত পরামর্শ করিতেন; ইংরেজদিগের ন্যায় ফরাসীদিগের সহিতও জগৎশেঠগণের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। তাঁঁহারাও জগৎশেঠের দ্বারা আপনাদের সমুদায় আবেদনাদি নবাব-দরবারে প্রেরণ করিতেন। এই সময়ে চন্দননগরের ফরাসী গভর্নমেন্টের নিকট জগৎশেঠদিগের ১৫ লক্ষ টাকা পাওনা ছিল।[১]

 কলিকাতা আক্রমণে ইংরেজদেগের যে-দুর্দশা উপস্থিত হয় তাহার সংবাদ মাদ্রাজে পৌছিলে, তথা হইতে ক্লাইব ও ওয়াটুসন আসিয়া কলিকাতার পুনরুদ্ধার এবং চন্দননগর ও হুগলী অধিকার করিয়া নবাবের সহিত সন্ধিস্থাপন করেন। নবাবের সহিত সন্ধিস্থাপনের জন্য ক্লাইব জগৎশেঠকে পত্র লিখিয়াছিলেন। ইংরেজের নবাবের সহিত সন্ধিস্থাপন করিলেন বটে, কিন্তু গোপনে গোপনে তাহার সর্বনাশের চেষ্টা করিতে লাগিলেন। এদিকে সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও গুরুতরভাব ধারণ করল। এই ষড়যন্ত্রের মন্ত্রণা ও মন্ত্রণাস্থল লইয়া নানারূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে। কোন কোন প্রবাদানুসারে জগৎশেঠের বাটতে এই মন্ত্রণা-সভার অধিবেশন হয়। সেই সভায় রাজা মহেন্দ্র (দুর্লভরাম), রাজা রামনারায়ণ, রাজা রাজবল্লভ, কৃষ্ণদাস, মীরজাফর প্রভৃতি উপস্থিত ছিলেন। সভাতে অনেক তর্কবিতর্কের পর কোন বিষয়ের সিদ্ধাস্ত না হওয়ায়, নদীয়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের অপেক্ষায় সে দিবস সভা-ভঙ্গ হয়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট সংবাদ পাঠাইলে, তিনি প্রথমে স্বীয় দেওয়ান কালীপ্রসাদ সিংহকে প্রেরণ করেন। কালীপ্রসাদ তারাহাদিগের উদ্দেশ্য অবগত হইয়া, রাজাকে সমস্ত বিষয় জ্ঞাপন করিলে, রাজা তৎপরে নিজেই মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন। পুনর্বার জগৎশেঠের বাটতে মন্ত্রণা-সভার অধিবেশন হয়। সভাতে কেহ কেহ যবনাধিকারের পরিবর্তে হিন্দুশাসনের প্রস্তাব করেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রথমে এ বিষয়ে কোন উত্তর দেন নাই; পরে তিনি বলিলেন যে, যে মন্ত্রণাসভায় মীরজাফর একজন নেতা, সেখানে যবনাধিকার নিরাকৃত হওয়া সঙ্গত বলিয়া বোধ হয় না। আমার মতে মীরজাফরকে সহায় করিয়া ইংরেজদেগের সহিত যোগ দিয়া সিরাজকে পদচ্যুত করা যাইতে পারে। ইংরেজদেগের সহিত আমার বিলক্ষণ পরিচয় আছে; সুতরাং

  1. Orme's Indostan, Vol. II, p. 138.