পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৪৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী।

সাহসী হইত না। আমরা জানিতে পারি যে, ১৭৫৮ খ্রীঃ অব্দে ডগলাস নামে কোম্পানীর একজন উত্তমর্ণ কলিকাতা টাঁকশালের টাকা লইতে অস্বীকৃত হইয়া বলেন যে, কলিকাতার মুদিত মুদ্রা লইলে, তাহাকে শতকরা ৫ হইতে ১০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি স্বীকার করিতে হইবে। কারণ মুদ্রাপ্রচলনের ভার জগৎশেঠের উপর নির্ভর করিতেছে। তিনি ইচ্ছা করিলে, নিজের সুবিধানুযায়ী সমস্তই পরিবর্তন করিতে পারেন। এই সময়ে জগৎশেঠ বাটা দিয়া মুর্শিদাবাদ টাঁকশালে নিজের সমস্ত মুদ্র মুদ্রিত করিতেন। ১৭৬০ খ্রীঃ অব্দে, কাশীমবাজারের অধ্যক্ষ ব্যাট্‌সন সাহেব কলিকাতায় লিখিয়া পাঠান যে, জগৎশেঠ শতকরা এক-দ্বিতীয়াংশ বাটা দিয়া আপনার মুদ্র মুদ্রিত করিতেছেন। তজ্জন্য তাঁহার বিলক্ষণ লাভ হইতেছে। নবাব তাহার নিকট ঋণপাশে বদ্ধ থাকায়, তাহাকে ঐরূপ অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। পলাশীর যুদ্ধের পরও জগৎশেঠের সহিত ইংরেজদের অর্থসম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হয় নাই। অনেক দিন পর্যন্ত সে সম্বন্ধ দৃঢ়ভাবেই ছিল। ১৭৬০ খ্রীঃ অব্দে মার্চ মাসে ঢাকার ইংরেজ অধ্যক্ষ কলিকাতায় লিখিয়া পাঠান যে, তাহদের ঢাকার কোষাগারে অর্থের এরূপ অভাব উপস্থিত হইয়াছে যে, মাসিক বায়নির্বাহ হওয়া সুকঠিন। এরূপ স্থলে কোম্পানীর কার্যের জন্য টাকা না পাঠাইলে, অথবা জগৎশেঠের নিকট হইতে টাকা লইবার অনুমতি না দিলে, অত্যন্ত বিপদ ঘটিবার সম্ভাবনা।[১] ইংরেজরা জগৎশেঠকে বরাবরই সম্মানপ্রদর্শন করিতেন। অনেক স্থলে তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৭৫৯ খ্রীঃ অব্দের সেপ্টেম্বর মাসে নবাব জাফর আলি খা ঁ(মীরজাফর) কলিকাতায় উপস্থিত হইলে, সঙ্গে জগৎশেঠ ও অন্যান্য কর্মচারিগণও গমন করেন। ইংরেজরা তাহাদের অভ্যর্থনার জন্য যথেষ্ট যত্ন করিয়াছিলেন। নবাবের বাসস্থান ও কলিকাতার দুর্গ প্রভৃতি উজ্জ্বল আলোকমালায় সুসজ্জিত এবং পতাকাশোভিত কৃত্রিম তোরণাদি দ্বারা সমস্ত কলিকাতা নগরীকে শোভাময়ী করা হইয়াছিল। তস্তিন্ন পান, ভোজন, নৃত্যগীত ও অন্যান্য আমোদপ্রমোদেরও সুবন্দোবস্ত করা হয়। এই অভ্যর্থনায় প্রায় ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার কথা শুনা যায় এবং কেবল জগৎশেঠের সমাদরের জন্য ১৭,৩৭৪ টাকা আর্কট মুদ্রা ব্যয় করা হইয়াছিল[২]

 জগৎশেঠের সবিশেষ সাহায্যে মীরজাফর বাঙ্গলার মসনদে উপবিষ্ট হইয়াছিলেন। তিনি ইংরেজদের অর্থীপপাসা মিটাইবার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হন; তজ্জন্য শেঠদিগের নিকট হইতে তাঁহাকে প্রতিনিয়ত ঋণ করিতে হইত। অর্থের জন্য অবিরত শেঠদিগকে পীড়াপীড়ি করায়, ক্রমে নবাবের সহিত তাঁহাদের মনোমালিন্য উপস্থিত হয়। এই সময়ে শাহজাদা শাহ আলম বাঙ্গলা রাজ্য অধিকারের জন্য বিহারে উপস্থিত হন। শাহজাদার বিহারে অবস্থিতিকালে জগৎশেঠ মহাতপচাঁদ ও মহারাজ

  1. Proceedings of the Council of Calcutta, 10th March, 1760.
  2. Hunter's Statistical Account of Murshidabad, p. 260.