পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
জগৎশেঠ
৪৭

আমার কার্যনির্বাহের জন্য তাহাদিগের বিশেষ আবশ্যক হইয়াছে বলিয়া, আমি তাহাদিগকে আহবান করিয়াছি। আশ্চর্যের বিষয় যে, আপনার প্রতিদিন সিপাহী পাঠাইয়া আমার আমীন ও অন্যান্য কর্মচারিদিগকে ধৃত করিয়া অযথা অত্যাচারের সহিত তাহাদিগকে বন্দী করিয়া রাখিতেছেন। আপনাদের ঐরূপ ব্যবহারে সন্ধিভঙ্গ হয় না, অথচ আমি আমার অধীন লোকদিগকে নিজের প্রয়োজনের জন্য আহবান করিলে, অমনি সন্ধিভঙ্গ হইয়া যায়! আমি তাহাদিগকে সরকারের ও তাহাদের নিজের কার্যনির্বাহের জন্য মুঙ্গেরে আনয়ন করিয়াছি; তাহাদিগকে এখানে আনিবার অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই।”[১] ইহার পর ক্লমে ইংরেজদেগের সহিত মীর কাসেমের বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠিলে, নবাব কাটোয়, গিরিয়া, উধুয়ানাল প্রভৃতি স্থানে পরাজিত হইয়া মুঙ্গেরে জগৎশেঠ ও অন্যান্য বন্দী কর্মচারী এবং রাজা ও জমিদারদিগের বিনাশ সাধন করেন। জগৎশেঠ মহাতপচাঁদকে অত্যুচ্চ দুর্গশিখর হইতে গঙ্গাগর্ভে নিক্ষেপ করা হয়। মহারাজ স্বরূপচাঁদও ঐ সঙ্গে ইহজীবনের লীলা শেষ করিতে বাধ্য হন।[২]

 জগৎশেঠ মহাতপচাঁদ ও মহারাজ স্বরূপচাঁদের মৃত্যুর পর তাহদের জ্যেষ্ঠপুত্র খোশালচাঁদ ও উদায়ৎচাঁদ তাহাদের উত্তরাধিকারিত্ব লাভ করেন। ১৭৬৬ খ্রীঃ অব্দে বাদশাহ শাহ আমলের নিকট হইতে খোশালচাঁদ জগৎশেঠ ও উদীয়ৎচাঁদ মহারাজ উপাধি প্রাপ্ত হন। তাঁহারা মহাতপচাঁদ ও স্বরূপচাঁদের ন্যায় এক সঙ্গে কারবার চালাইতেন। এই সময় হইতে তাঁহাদের ব্যবসায় মন্দীভূত হইতে আরম্ভ হয়। ১৭৬৫ খ্রীঃ আন্দের মে মাসে তাহার ক্লাইবকে আপনাদের দুরবস্থার কথা লিখিয়া পাঠান। তাহাতে তঁহাদের কনিষ্ঠ ভ্রাতাদের শোচনীয় অবস্থার কথা আরও বিশেষ রূপে উল্লিখিত থাকে। খোশালচাঁদ ও উদায়ৎচাঁদ ব্যতীত মহাতপচাঁদের গোলাপচাঁদ ও স্বরূপচাঁদের মিহিরচাঁদ নামে পুত্র ছিল। যৎকালে মহাতপচাঁদ ও স্বরূপচাঁদ বন্দী অবস্থায় মুঙ্গেরে অবস্থিতি করিতেছিলেন, সেই সময়ে গোলাপচাঁদ ও মিহিরচাঁদ তাঁহাদের সহিত তথায় বন্দীঅবস্থায় কালযাপন করেন। মহাতপচাঁদ ও স্বরূপচাঁদের মৃত্যুর পর তাঁহারা মীর

  1. Vansitart's Narrative, Vol. I, pp. 206-212.
  2. মহাতপচাঁদকে জলমগ্ন করার কথা মুতাক্ষরীনের অনুবাদক উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু স্বরূপচাঁদের কি প্রকারে মৃত্যু হয়, তাহার কোন কথা তিনি বলেন নাই। মুতাক্ষরীনের অনুবাদক সেই স্থানে আর একটি চমৎকার ঘটনার উল্লেখ করিয়াছেন; চুণী নামক জগৎশেঠের জনৈক ভৃত্য প্রভুর সহিত একত্র বদ্ধ হইয়া জলমগ্ন হইতে, অথবা তাহার পূর্বে প্রাণ বিসর্জন করিবার জন্য অশেষ প্রকার অনুনয় বিনয় করিতে থাকে। কিন্তু তাহার প্রার্থনা পূর্ণ করা হয় নাই। অবশেষে সে নিজেই দুর্গাঁশখর হইতে পতিত হয়। জগৎশেঠ তাহাকে নিরন্ত হইবার জন্য অতিশয় অনুনয় বিনয় করিয়াছিলেন; কিন্তু সে তাঁহার কথায় মনোযোগ দেয় নাই। অনুবাদক বাবুরাম নামে চুণাঁর জনৈক আত্মীয়ের নিকট হইতে এই সংবাদ অবগত হন। (Seir Mutaqherin Vol II p, 268.)