পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৫৪
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

করিয়া থাকে। এই পার্শ্বনাথের মন্দির ভাগীরথীতীরে অবস্থিত ছিল। ভাগীরথীগর্ভস্থ হওয়ার উপক্রম হওয়ায়, তাহা ভগ্ন করিয়া ঠাকুরবাটীর প্রাঙ্গণে ফেলিয়া রাখা হইয়াছে। জগৎশেঠগণ বৈষ্ণব হওয়ার পূর্বে সেই মন্দিরে পূজোপাসনাদি করিতেন। অতঃপুর হইতে পার্শ্বনাথের মন্দির ও বর্তমান গোবিন্দদেবের মন্দিরে যাইবার জন্য সুড়ঙ্গ ছিল; এক্ষণে তাহার পথ বন্ধ হইয়া গিয়াছে। বর্তমান ঠাকুরবাটী পূর্মুখে অবস্থিত এবং সদর রাস্তার উপরে। ইহার একটি প্রকাণ্ড তোরণ-দ্বার অদ্যাপি বর্তমান আছে। ঠাকুরবানীর পশ্চাতে কতকগুলি উচ্চ ভিত্তি দৃষ্ট হয়। তথায় জগৎশেঠগণের উপবেশনালয় ছিল। সেই সমস্ত ভিত্তি এক্ষণে জঙ্গলে পরিপূর্ণ; তথায় একটি ফোয়ারার হ্রদ বা চৌবাচ্চা দেখা যায়। তাহার কিয়দংশ আজিও কষ্টিপ্রস্তরমণ্ডিত আছে। এই বৈঠকখানার পশ্চাতে ভাগীরথীতীরে কতকগুলি আমবৃক্ষের শ্রেণী। শুনা যায়, সেই স্থানে জগৎশেঠদিগের গদী বা কারখানা ছিল। তাহার ভিন্ন ভিন্ন প্রকোষ্ঠে ভিন্ন ভিন্ন দেশের মুদ্রা রক্ষিত হইত এবং অবিরত অধমর্ণগণে পরিপূর্ণ থাকিত। এক্ষণে তাহার ভিত্তিরও চিহ্নমাত্র নাই। ইহাদের নিকটে একটি অর্ধভন্ন চৌদুয়ারী আছে; এই চৌদুয়ারীর উত্তর দ্বার দিয়া জগৎশেঠদিগের ভবনে, পূর্ব দ্বার দিয়া ঠাকুরবাটীতে, দক্ষিণ দ্বার দিয়া খোশালবাগে এবং পশ্চিম দ্বার দিয়া ভাগীরথীতীরে গমন করা যায়।

 দক্ষিণ দিকে যেরূপ অধভন্ন চৌদুয়ারটি রহিয়াছে, শুনা যায়, উত্তর দিকে ঠিক এইরূপ আর একটি চৌদুয়ারী ছিল। ঠাকুরবাটীর উত্তর-পশ্চিমে, একটি বাটীর ভিত্তির ভগ্নাবশেষ আছে, তাহাকে সুখমহাল বলিত; ইহার নিকট রংমহল নামে আর একটি বাটী ছিল। উৎসবকালে সুখমহাল ও রংমহল সুসজ্জিত হইত এবং নবাব ও তদ্বংশীয়গণ সুখমহলে উপবেশন করিয়া উৎসবের গৌরব বৃদ্ধি করিতেন। খোশালবাগে এক খানি সুন্দর বাঙ্গলা আছে। ঠাকুরবাটী ব্যতীত জগৎশেঠদিগের অন্তঃপুরের সামান্য কিয়ৎদশ এক্ষণে বর্তমান। জগৎশেঠ গোলাপচাঁদ সেইখানেই অবস্থিতি করিতেন; গত ভূমিকম্পের[১] পর হইতে তিনি নূতন বাটীতে বাস করেন। জগৎশেঠদিগের বাটীর উত্তরে একটি মন্দির দৃষ্ট হয়; তাহাকে সতীস্থান কহে। সেই স্থানে কোন সতী সহগমন করায় তাহার স্মৃতির জন্য মন্দিরটি নিমিত হয়। জগৎশেঠবংশীয় বলিয়া কেহ কেহ সেই সতীর পরিচয় প্রদান করিয়া থাকেন। এবং তৎসম্বন্ধে অন্য বিবরণও শুনা যায়। ফলতঃ, সতীস্থান সম্বন্ধে কোন প্রামাণিক বিবরণ পাওয়া যায় না। মহিমাপুরের অপর পারে ডাহাপাড়ার উত্তরে সিরাজউদ্দৌলার ভন্ন প্রাসাদাদির নিকট হইতে একটি খাল বহু দূর পর্যন্ত গমন করিয়াছে। এই খালটি জগৎশেঠগণ খনন করাইয়া বাঁধাইয়া দিয়াছিলেন। ইহাকে শেঠের লহর কহে। শেঠের তথায় নৌবিহার করিতেন। এক্ষণে বর্ষাকাল ব্যতীত অন্য সময়ে তাহার অধিকাংশ স্থান

  1. ১৮১৭ সালের ভূমিকম্প।