পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বঙ্গাধিকারী
৫৭

কাননগো পদে নিযুক্ত হন এবং তিনি তোডরমল্পকে উক্ত কার্যে সহায়তা করিয়াছিলেন। ভগবান্‌ কার্যোপলক্ষে দিল্লিতে অবস্থিতি করায়, আকবরশাহের অনুকূল দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া উক্ত পদ প্রাপ্ত হন। কিন্তু এই প্রবাদে বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ, ভগবানের পরবর্তী তদ্বংশীয়গণের নিয়োগের সময় হইতে, ইহার মীমাংসা করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠে। যদি ভগবান্‌ বাঙ্গলার রাজস্বসম্বন্ধীয় কোন বন্দোবস্তের সময় বিশিষ্টরূপ কার্যদক্ষতা দেখাইয়া থাকেন, তাহা হইলে শাহসুজার সময়ে দেখাইয়াছিলেন বলিয়া আমাদের বিবেচনা হয়।[১] ভগবান্ রায় বর্ধমান জেলার কাটোয়ার নিকটস্থ খাজুডিহি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহারা উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ ও মিত্রবংশসস্তৃত।

 ভগবান্‌ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার প্রধান কাননগো পদে নিযুক্ত হইয়া অত্যন্ত কার্যদক্ষতা প্রকাশ করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। প্রধান কাননগো পরগণাকাননগোদিগের নিকট হইতে ভূমিসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র তলব করিয়া রাখিতেন। কাননগো-দপ্তরে ভূমিসংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্রই পরম যত্নে রক্ষিত হইত। পরগণা-কাননগোগণ জমির পরিমাণ, নিরিখ, সাধারণ হস্তযুদ, সরকারের প্রাপ্য কর ও অন্যান্য আবওয়ার এবং মাল, লাখেরাজ জায়গীর, ইস্তমুরারী, মোকররী, উর্বর, অনুর্বর

  1. বঙ্গাধিকারিগণের যে-দুইখানি ফার্মান বর্তমান আছে, তন্মধ্যে একখানি ভগবানের পুত্র হরিনারায়ণের কানুনগো পদে নিযুক্ত হওয়ার সময়ে দেওয়া হয়। ভগবানের পর তাহার ভ্রাতা বঙ্গবিনোদ, তৎপরে তাহার পুত্র হরিনারায়ণ উক্ত পদ প্রাপ্ত হন। আরঙ্গজেব বাদশাহ হরিনারায়ণকে এই ফার্মান প্রদান করেন। তাহার রাজত্বের ২২শ অব্দে হিজরী ১০৯০ (১৬৭৯ খ্রীঃ অব্দে) উক্ত ফার্মান দেওয়া হয়। তাহাতে এই রূপ লিখিত আছে যে, বর্তমান বর্ষের প্রথমে বিনোদের মৃত্যুর পর তাহার ভ্রাতুস্পুত্র হরিনারায়ণকে সুবা বাঙ্গলার অর্ধাংশের কাননগোকার্য | দেওয়া গেল। পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, ১৮৮২ খ্রীঃ অব্দে তোডরমল্লের রাজ্যসংক্রান্ত বন্দোবস্ত হয়। ১৫৮২ হইতে ১৬৭৯ খ্রীঃ অব্দের ব্যবধান ১৭ বৎসর। ভগবান্ তাহার ২১ বৎসর পূর্বে কার্যে নিযুক্ত হইলে, তাহার কার্যগ্রহণ হইতে হরিনারায়ণের নিয়োগের ব্যবধান প্রায় ১০০ বৎসর হইয়া উঠে। ১০০ বৎসরের মধ্যে ভগবান্‌ ও বঙ্গবিনোদ কেবল দুই ভ্রাতার কার্য করা অসম্ভব বলিয়া মনে হয়; এবং উক্ত ভ্রাতৃদ্বয়ের বয়সের পার্থক্যও যৎপরোনাস্তি অধিক হয় এবং উভয়কেই দীর্ঘকাল ধরিয়া কার্য করিতে হয়। আবার দেখিতে পাওয়া যায় যে, ১৬৭৯ খ্রীঃ অব্দের পর হইতে ১০০ বৎসরের মধ্যে বঙ্গাধিকারিগণের প্রায় ৪ পুরুষের অন্তর্ধান ঘটিয়া আসিয়াছে। সেইজন্য আমাদের নিকট পূর্ব ১০০ বৎসরের মধ্যে কেবলই দুই ভ্রাতার কার্য করা অসম্ভব বোধ হইতেছে। ঐরূপ ঘটনার সমর্থন করিতে গেলে, অনেক কষ্টকল্পনা করিতে হয়; কোন বিশিষ্ট প্রমাণ ব্যতীত তাহা সহজে বিশ্বাস করা যায় না। আকবরশাহের রাজত্বের | শেষ ভাগে, ভগবান্ অল্পবয়সে কার্য গ্রহণ করিলে, এই প্রবাদ কতকটা প্রমাণ করিতে চেষ্টা করা যায়। কিন্তু তাহাদের কষ্টকল্পনার যথেষ্ট প্রয়োজন হইয়া উঠে। এই কারণে শাহসুজার রাজ-বন্দোবস্ত-সময়ে আমরা ভগবানের কার্যদক্ষতার কথা উল্লেখ করিতে চাই। ভগবান ও বঙ্গবিনোদের নিয়োগসম্বন্ধীয় ফার্মান থাকিলে ইহার সিদ্ধান্ত হইত। কিন্তু এক্ষণে যখন তাহাদের অভাব, তখন যাহা নিতান্ত অসম্ভব বোধ না হয়, সেইরূপ সিদ্ধান্ত করাই যুক্তিযুক্ত।