পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৬২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

স্থলে অর্ধ সুবার কাননগো পদে নিযুক্ত করা গেল।[১] মুসলমান ঐতিহাসিকগণ বলিয়া থাকেন যে, মুশিদকুলী খা ঁশিবনারায়ণকে দশ আনা ও জয়নারায়ণকে হয় আনার কাননগো পদ প্রদান করেন, কিন্তু তাহা প্রকৃত নহে।[২] গ্রান্ট সাহেব বলেন যে, শিবনারায়ণের রসুমের লাঘব হওয়ায়, তাহাকে রুকুনপুর জমিদারী প্রদান করা হয়। কিন্তু শিবনারায়ণের রসুমের লাঘব হওয়ার কোনই কারণ দেখা যায় না।[৩]

 মুশিদকুলী খাঁর মৃত্যুর পর সূজা উদ্দীন বাঙ্গলার সিংহাসনে অধিরূঢ় হন। এই সময়ে শিবনারায়ণ কাননগোর কার্য করিতেছিলেন। সুজা উদ্দীন তাহার কাননগোকার্যে কোনরূপ হস্তক্ষেপ না করিয়া, আমলাদ নামে জনৈক বিশ্বাসী কর্মচারীকে খালসার দেওয়ানী পদে নিযুক্ত করিয়া সম্রাট দরবার হইতে রায়রায়ান উপাধি আনাইয়া তাহাকে ভূষিত করেন। রায়রায়ান উপাধি বাঙ্গলায় এই প্রথম।[৪] রায়রায়ানগণ রাজস্বমন্ত্রীর কার্য করিতেন; রাজস্ববিভাগের যাবতীয় বন্দোবস্ত তাহাদের হস্তে ন্যস্ত ছিল। কাননগোগণ সেই সকল বন্দোবস্তের কাগজপত্র রক্ষা করিতেন, এবং রাজশ্ববিভাগ হইতে জমিদার বা প্রজাদিগকে কোন কাগজপত্র দিতে হইলে তাহাতে স্বাক্ষর ও মোহর। করিয়া দিতেন। বর্তমান সময়ের রেজিস্ট্রারের কার্য কাননগোগণের দ্বারা সম্পন্ন হইত। কিন্তু রায়রায়ানগণ রাজবিভাগের সর্বময় কর্তা ছিলেন। এই রায়রায়ানপদ বা খালসার দেওয়ানী কোম্পানির রাজত্বেও প্রচলিত ছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর ‘তাহার লোপ হয়। প্রসঙ্গক্রমে আমরা এ স্থলে রায়হানগণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করিতেছি।

 পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, আমলাদ প্রথমে রায়রায়ান উপাধি প্রাপ্ত হন। আমলাদের মৃত্যুর পর আলিবর্দী খা ঁচায়েন রায় নামে নিজের বিশ্বাসী কর্মচারীকে খালসার দেওয়ানী ও রায়রায়ান উপাধি প্রদান করেন। চায়েন রায় আলিবর্দীর সময়ে

  1. শিবনারায়ণকে যে ফার্মান দেওয়া হয়, তাহার পরপৃষ্ঠায় দেখা যায়, দর্পনারায়ণের নিকট ১ দফায় ৩৪৩৮৪২০, ২ দফায় ৮২৭৩to, ৩ দফায় ১৪৬৮৬, ৪ দফায় ৪৪৭৭২, ৫ দফায়। ২৩৪৪৫, টাকা পাওনা ছিল। শিবনারায়ণ সেই সমস্ত পরিশোধ করেন এবং তাহাকে ফার্মান লইতে ২ লক্ষ টাকা পেঙ্কস দিতে হয়।
  2. Riyaz-us-salatin, p. 260.
  3. এই রুকুনপুর অত্যন্ত বৃহৎ জমিদারী। ইহা ৬২ পরগণায় বিভক্ত ছিল। এক মুর্শিদাবাদ চাকলায় ইহার ২৮টি পরগণা দেখা যায়।
  4. আলমচাঁদের পূর্বে কাহারও কাহারও লিখিত বিবরণে রায়রায়ান উপাধি প্রাপ্তির উল্লেখ আছে। কলিকাতা রিভিউ পত্রিকায় রাজশাহীবংশের বিবরণে নাটোরবংশের আদিপুরুষ রঘুনন্দনকে রায়রায়ান উপাধি দেওয়া হইয়াছিল বলিয়া দেখা যায়। কিন্তু সে সকলের কোনই মূল নাই। রিয়াজুস সালাতিন গ্রন্থে স্পষ্টাক্ষরে লিখিত আছে যে, আলমাদের সময় পর্যন্ত বাঙ্গলার দেওয়ানী বা নিজামতের মুৎসুদ্দিগণের মধ্যে কেহ এরূপ উপাধি প্রাপ্ত হন নাই। (Riyaz-us-salatin, p. 293.)। রিয়াজের কথা উপেক্ষা করিয়া আমরা এরূপ স্থলে কেবল প্রবাদমূলক কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারি না।