পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বঙ্গাধিকারী
৬৫

বৃত্তির জন্য আবেদন করিয়াছিলেন; কিন্তু তাহার সে আবেদন গ্রাহ্য হয় নাই। ভট্টবাটীবংশীয়ের উত্তররাঢ়ীয় সিংহবংশীয়, তাহাদের ক্ষমতা বড় কম ছিল না। উক্তবংশীয় মহেন্দ্রনারায়ণের পর কালীনারায়ণ ও তৎপরে সূর্যনারায়ণের নাম শুনা যায়। এক্ষণে তাহাদের দৌহিত্রবংশ বিদ্যমান। অনেকে ডাহাপাড়া ও ভট্টবাটীবংশীয়দিগকে এক বংশ বলিয়া মনে করিয়া থাকেন, ইহা তাহাদের সম্পূর্ণ ভ্রম। দুই বংশ উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ বলিয়া এইরূপ ভ্রম হওয়ার সম্ভাবনা; কিন্তু ডাহাপাড়াবংশীয়ের মিত্র ও ভট্টবাটীবংশীয়ের সিংহ।

 মুর্শিদাবাদের মধ্যে সম্মানে ক্রমান্বয়ে নবাব, জগৎশেঠ ও বঙ্গাধিকারিবংশীয়েরা শ্রেষ্ঠ ছিলেন। অনেক রাজা-মহারাজা বঙ্গাধিকারিগণকে যথোচিত সমাদর প্রদর্শন করিতেন। বঙ্গাধিকারিগণ বাদশাহ দরবার হইতে নিযুক্ত হওয়ায়, তাহাদের সম্মানের বৃদ্ধি হয়। তন্নি তাহাদের রাশি রাশি সৎকীতি সমগ্র বঙ্গরাজ্যে তাহাদের গৌরব ঘোষণা করিয়াছিল। সেই সমস্ত সৎকীতির এক্ষণে অনেক লোপ হইয়া গিয়াছে। বঙ্গাধিকারিগণের প্রধান সৎকীতির আদর্শস্থল কিরীটেশ্বরীও এক্ষণে তাঁহাদের হস্তচ্যুত। তাহাদের অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাহারও অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়াছে। বঙ্গাধিকারিগণের প্রাচীন ভবন এক্ষণে ভগ্নাবস্থায় পতিত। দর্প নারায়ণের নিমিত বাটীর স্থানে স্থানে সামান্য চিহ্নমাত্র আছে। যে বারদুয়ারীভবনে বঙ্গের রাজা-মহারাজগণ বঙ্গাধিকারিগণকে সম্মান প্রদর্শন করিতে আসিতেন, তাহারই ভিত্তির কিয়দংশ এক্ষণে বর্তমান রহিয়াছে। প্রাচীন পূজার বাটীর ভগ্নাবশেষ ও স্থানে স্থানে দুই-একটি ভন্ন ফোয়ার ও ইন্দারা দেখা যায়। অন্তঃপুর-চত্বরের মধ্যে শিবনারায়ণী পুষ্করিণী ও ভুবনেশ্বরী দেবীর গৃহ অসংস্কৃত অবস্থায় নয়নপথে পতিত হয়। বাটীর চতুর্দিক জঙ্গলে পরিপূর্ণ ও বন্যজগণের আবাসস্থল হইয়া উঠিয়াছে। অপেক্ষাকৃত অল্পদিনের নির্মিত একটি বিশাল তোরণদ্বার সেই জলরাশির মধ্য হইতে মস্তক উত্তোলন করিয়া বঙ্গাধিকারিগণের পূর্বগৌরবের কথঞ্চিৎ আভাস প্রদান করিতেছে।