ইংরেজেরা চৌর্যবৃত্তি অবলম্বনে মীর কাসেমের শিবির আক্রমণ করিয়া, তাহা ছিন্নভিন্ন করিয়া ফেলেন। সুতরাং গিরিয়ার পর তাহাদের মধ্যে যে আর প্রকৃত যুদ্ধ হয় নাই, ইহা অনায়াসে বলা যাইতে পারে। পলাশীর ন্যায় গিরিয়াও বাঙ্গলার ইতিহাসে একটি শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়া থাকিবে।
গিরিয়া প্রান্তর পূর্ব-পশ্চিমে চারি ক্রোশের অধিক হইবে এবং উত্তর-দক্ষিণে আমরা হইতে সূতী পর্যন্তও প্রায় চারি ক্রোশ।[১] গিরিয়ার স্থান-নির্ণয় লইয়া নানা জনে নানা কথা বলিয়া থাকেন। টিফেনথেলার ইহাকে ভাগীরথীর পূর্বপারে নির্দেশ করিয়াছেন। অর্মে গিরিয়ার প্রান্তরকে পশ্চিমতীরস্থ বলিয়াছেন।[২] রেনেলের কাশিমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে গিরিয়া গ্রাম পূর্ব পারে ও গিরিয়া সমরক্ষেত্র পশ্চিম পারে নির্দিষ্ট হইয়াছে। ১৮৫২ খ্রীঃ অব্দ হইতে ৫৫ অব্দ পর্যন্ত জরিপ-বিভাগকৃত মুর্শিদাবাদ জেলার মানচিত্রে ও বর্তমান সময়ে গিরিয়া গ্রাম ভাগীরথীর পূর্ব পারেই আছে এবং বর্তমান গিরিয়া গ্রাম যে-স্থলে অবস্থিত সে স্থান কখনও ভাগীরথীর গর্ভস্থ হয় নাই। কিন্তু এক্ষণে ভাগীরথী তাহার প্রান্তদেশ দিয়া প্রবাহিত হইতেছেন। কালে গিরিয়া যে ভাগীরথীর গর্ভস্থ হইবে না, একথা কে বলিতে পারে? এই ভিন্ন ভিন্ন মতের সামঞ্জস্য করা দুরূহ নহে। পূর্বের বিবরণ এবং বর্তমান সময়ের অবস্থানুসারে ইহা স্থির সিদ্ধান্ত হয় যে, গিরিয়া গ্রাম বরাবরই ভাগীরথীর পূর্ব পারেই অবস্থিত রহিয়াছে। কিন্তু ভাগীরথীর উভয়তীরবতী বিস্তৃত প্রান্তর গিরিয়াপ্রান্তর নামে অভিহিত হওয়ায়, কেহ কেহ গিরিয়া-প্রান্তরকে কেবল পশ্চিমতীরস্থ বলিয়াছেন। কিন্তু উভয়তীরবর্তী প্রান্তরের নামই গিরিয়া। যাঁহারা গিরিয়া। প্রান্তরকে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে নির্দেশ করিয়াছেন, তাঁহারা আলিবর্দীর সহিত।
- ↑ মুতাক্ষরীনে এই দূরত্ব কিছু অধিক পরিমাণে লিখিত হইয়াছে। তাহাতে লিখিত আছে যে, নবাব সরফরাজ খা ঁআলিবর্দীর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিয়া প্রথমে খামরায় উপস্থিত হন; পরে গিরিয়া গ্রামের নিকট শিবির সন্নিবেশ করেন। আলিবর্দী সেই সময় সূতীতে অবস্থান করিতেছিলেন। মুতাক্ষরীনকার সরফরাজের শিবির হইতে আলিবর্দীর শিবির ৫৬ ক্রোশের অধিক নয় বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। (Seir Mutaqherin Trans. Vol. I, p. 352.) রেনেলের কাশিমবাজার দ্বীপের মানচিত্রানুযায়ী সূতী ও খামরার ব্যবধান চারি ক্রোশের অধিক নহে। খামরা হইতে গিরিয়া প্রায় দুই ক্রোশ পশ্চিম ও কিছু উত্তরও বটে। তাহা হইলে সূতী ও গিরিয়ার ব্যবধান চারি ক্রোশের কম হয়। ১৮৫২ খ্রীঃ অব্দ হইতে ১৮৫৫ পর্যন্ত জরিপবিভাগ-কতৃক মুর্শিদাবাদের যে-মানচিত্র অকিত হইয়াছে, তাহাতে সূতী ও গিরিয়ার ব্যবধান ৩ ক্রোশের কিছু উপর। বর্তমান গিরিয়া হইতেও সূতী ৩ ক্রোশের কিছু উপর হইবে। গিরিয়া গ্রামের মধ্যে মধ্যে পরিবর্তন ঘটিলেও অধিক দূর ব্যাপিয়া সে পরিবর্তন কখনও ঘটে নাই। সুতরাং সায়রের মতানুযায়ী গিরিয়া ও সূতীর ব্যবধান কিছু অধিক বলিয়াই বোধ হয়।
- ↑ Orme's Indostan, Vol. II, p. 31.