পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৭০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

হইয়া যেমন হস্তিপৃষ্ঠ হইতে অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিতে যাইতেছিলেন, অমনি আরও দুইটি গুলি আসিয়া তাহাকে ভূতাশায়ী করিয়া ফেলে। কুতুব ও পীরের তরবারিচালনে ছেদন হাজারী বিশেষরূপে আহত হন, পরে অব্যর্থ গুলির আঘাতে পিতার পশ্চাৎ পশ্চাৎ সেই পিত্রাদেশ-পরায়ণ পুত্রদ্বয়ও ইহজগৎ হইতে চিরবিদায় সইতে বাধ্য হন। যে স্থানে তাহাদের পবিত্র দেহ নিপতিত হইয়াছিল, সেই স্থানে তাহাদিগকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু গওস খার গুরু সা হায়দরী নামে জনৈক ফকীর তাহাদিগের মৃতদেহ গিরিয়া হইতে উত্তোলন করিয়া ভাগলপুরে লইয়া যান এবং তথায় তাহাদিগকে পুনঃসমাহিত করেন।

 সা হায়দরী ভাগলপুরেই বাস করিতেন, সিয়াধর্মের প্রতি আঁহার অত্যন্ত অনুরাগ ছিল। সা হায়দরী একসময়ে গওস খাঁকে কোন সাংঘাতিক রোগ হইতে মুক্ত করায়, তিনি তাহার শিষ্যত্ব ও সিয়াধর্ম গ্রহণ করেন। গওস খাঁর মৃত্যুশ্রবণে সা হায়দরী মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইয়া আলিবর্দীকে যৎপরোনাস্তি ভৎসনা করিয়াছিলেন। আলিবর্দী তাহার কথার প্রতিবাদ করিতে সাহস করেন নাই। পরে তিনি গিরিয়া হইতে গওস খার, তাহার পুত্রদ্বয়ের ও অন্যান্য সহচরের মৃতদেহ উত্তোলন করিয়া ভাগলপুরে লইয়া গিয়া আবার সমাহিত করেন এবং আয়ুপূর্ণ হইলে প্রিয় শিষ্য গওস খাঁর পার্শ্বে নিজেও সমাহিত হন।[১] প্রভুর অন্নে প্রতিপালিত হইয়া প্রভুর সিংহাসন রক্ষার জন্য অকাতরে প্রাণবিসর্জন দেওয়ায়, গওস খা ঁসাধারণের নিকট মহাপুরুষ বলিয়া কীতিত হইয়া আসিতেছেন।

 আলিবর্দী খা ঁএক দিকে যেমন বিশ্বাসঘাতকতাপূর্বক প্রভুপুত্রের রক্তপাত করিয়া সিংহাসন লাভ করেন, অন্যদিকে সেইরূপ গওস খা ঁও তাহার পুত্রদ্বয় আপনাদিগের শোণিত দান করিয়া প্রভুর সিংহাসন রক্ষা করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। গওস খাঁর সেই অনুপম মহত্ত্ব বহু দিন হইতে গিরিয়ার চতুষ্পর্শ্বে গ্রাম্য-কবিতায় গীত হইয়া আসিতেছে।[২] সাধারণ লোকে তাহাকে অতিমানুষ বলিয়া বিবেচনা করিয়া থাকে। এরূপ বিবেচনা সাধারণের মনে সহজেই উপস্থিত হইতে পারে। যিনি সপরিবারে ফকীরের নিকট দীক্ষিত হইয়া প্রভুর কল্যাণসাধনোদ্দেশে অনায়াসে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারেন এবং যাহার পরিবারস্থ স্ত্রী-পুরুষ প্রত্যেকেই বীরত্বের পূর্ণাবতার, তাহাকে অতিমানুষ বিবেচনা করা অধিকতর আশ্চর্যের বিষয় নহে।[৩] গিরিয়ার যে-স্থানে

  1. Seir Mutaqherin Trans, Vol. I, p. 701.
  2. উক্ত গ্রাম্য কবিতাটি পরিশিষ্টে দুষ্টব্য।
  3. গওস খার পত্নীও বীরমণী ছিলেন। স্বামী ও পুত্রের দেহত্যাগের পর তিনি ভাগলপুরে বাস করিতেন। যৎকালে পেশওয়া বালাজী রাও বিহার হইতে বালায় আগমন করেন, সেই সময়ে তাহার সৈন্যরা ভাগলপুরে উপস্থিত হইলে, নগরের যাবতীয় লোক গঙ্গাপানে পলায়ন করে। কিন্তু বীররমণী গওস খাঁর পত্নী আপনার অল্পসংখ্যক অনুচর লইয়া স্বীয় বাসভবন রক্ষা করিতে প্রস্তুত হইলেন। মহারাীয় সৈন্যরা সমস্ত নগর লুণ্ঠন করিয়া সেই স্থানে